শিলিগুড়িঃ মাটি-পাথর দেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু তা তিস্তার জলের স্রোতে ভেসে গিয়েছে। এই চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় নেটিং করে মঙ্গলবার বোল্ডার ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এতেও ফল পাওয়া যাবে কিনা, সংশযে খোদ পূর্ত দপ্তরের বাস্তুকার, আধিকারিকরা। ফলে সিকিমের লাইফলাইন ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক কবে সচল হবে, তা ঘটনার তিনদিন পরেও অনিশ্চিত। সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে যোগাযোগের প্রধান রাস্তাটি বন্ধ থাকায় যথারীতি দুর্ভোগ অব্যাহত। সেনা সাহায্যের দাবিও উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে।
পুর্ত দপ্তর ন্যাশনাল হাইওয়ে ডিভিশন-৯ এর এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সুবোধ ছেত্রী বলছেন, দিনরাত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ চলছে। বোল্ডার ফেলানোর কাজও আমাদের তরফে শুরু হয়েছে। বৃষ্টি না হলে কাজ শেষ করতে বেশিদিন লাগবে না। তবে কবে রাস্তাটি চালু হবে, নির্দিষ্ট ভাবে বলার মতন পরিস্থিতি নেই। আবহাওয়া দপ্তরের যা পূর্বাভাস, তাতে রবিবারের আগে ভারী বর্ষণের তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। বরং চড়া রোদে দিন কাটবে বেশ কয়েকদিন। কিন্তু সোমবার থেকে টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান আবহাওযা দপ্তরের সিকিমের কেন্দ্রীয় অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা। অর্থাৎ সোমবারের মধ্যে যদি কাজ শেষ হয়ে জাতীয় সড়কটি যদি চালু না হয়, তবে সিকিমের পুজো পর্যটন খাদের কিনারায় দাঁড়াবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে কালিম্পংও।
সকালে স্ট্যন্ডে গাড়ি পার্ক করেও দুপুরেও একজন যাত্রীর মুখ দেখতে পারেননি এসএনটির পাশের স্ট্যান্ডের ছোটো গাড়ির চালকরা। কেউ গাছের তলায় বসে, কেউ আবার চায়ের দোকানে আড্ডায়। এমনই একজন মলিন রাইয়ের বক্তব্য, গ্যাংটক তো দুরের কথা, কালিঝোরা পর্যন্ত কেউ যাচ্ছে না। জানি না রাস্তা কবে ঠিক হবে।
ছবির তেমন কোনও পার্থক্য নেই এনজেপি স্ট্যান্ডেও। পাহাড়ের যা ভাড়া হচ্ছে, সবই দার্জিলিং, কার্শিয়াং অত্নবা মিরিকের। একেই অফসিজন, তার মধ্যে সিকিম এবং কালিম্পং যাওয়ার সরাসরি পথ বন্ধ থাকায়, ভাতে মারার জোগাড় হয়েছে বলে বক্তব্য এখানকার চালকদের। জাতীয়তাবাদী ট্যাক্সি অ্যান্ড প্রাইভেট কার ড্রাইভার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক উদয় সাহার বক্তব্য, পুজোর মুখে ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক বন্ধ হযে যাওয়ায় চরম সংকটে পড়েছি। বেকার অবস্থা প্রায় সকলেরই। জানি না কবে রাস্তাটি দিযে গাড়ি চলাচল শুরু করবে। সেনা বাহিনী দাযিত্ব নিলে একদিনে রাস্তাটি চালু হয়ে যেত। পুজো পর্যটনে এখনও বুকিং বাতিল না হলেও রাস্তা বন্ধ থাকায় অফসিজন পুরোপুরি ভাবে মার খেল বলে সিকিমের পর্যটন ব্যবসাযীদের বক্তব্য। গ্যাংটকের হোটেল ব্যবসায়ী অভিজিৎ সেনগুপ্ত বলছেন, নিরিবিলির জন্য এই সময় অনেকেই বেড়াতে আসেন। কিন্তু জাতীয় সড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ঘুরপথে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে কে চায়? রাস্তাটি দু-একদিনের মধ্যে চালু হলে রক্ষা। অন্যথায় পুজোর দিনগুলিও মার খাবে।
প্রবল বর্ষণের জেরে রবিবার শ্বেতীঝোড়ায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একটা অংশ ধসে যায়। পরবর্তীতে বাকি অংশও ধসে গিয়ে রাস্তাটিতে কার্যত খালের সৃষ্টি হয়। ওইদিন মাঝে কিছু সময়ের জন্য অক্ষত অংশ দিয়ে সিঙ্গেল ওয়েতে গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। ওই কারণেই অক্ষত অংশও ধসে গিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। ওইদিন থেকেই রাস্তা মেরামতির কাজে হাত দেয় পূর্ত দপ্তর। কিন্তু খাল দিযে তিস্তার জল প্রবল বেগে বইতে থাকায় মাটি-পাথর ফেলা কোনও কাজে লাগেনি। বলতে গেলে টানা দুইদিনের চেষ্টা জলে ভেসে যায়। এমন পরিস্থিতির জন্য মঙ্গলবার নেটিং করে বোল্ডার ফেলার সিদ্ধান্ত নেন পূর্ত দপ্তরের বাস্তুকাররা। দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, বোল্ডার ফেলার কাজ শেষ হলে যান চলাচলের উপযুক্ত হয়েছে কিনা সড়কটি, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। তারপরেই যান চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে রাস্তার দুই ধারে গার্ডওয়াল দেওযারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ত দপ্তর।