নয়াদিল্লি: মণিপুর ইস্যুতে সংসদের বাইরে বিবৃতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ বিরোধী শিবিরের অনড় দাবি, বাইরে নয় বরং সংসদের ভিতরে উভয়কক্ষে হাজির হয়েই মণিপুর ইস্যুতে বক্তব্য রাখতে হবে, আলোচনায় অংশ নিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে৷ নিজেদের দাবি-দাওয়ায় অনড় থাকলেও এখনও প্রধানমন্ত্রীকে সংসদীয় কক্ষে টেনে আনতে অপারগ বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোট। কোন পদ্ধতিতে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে এই অসাধ্যসাধন করা যায়, তা নিয়েই ‘ব্রেইন স্টর্মিং’-এ ব্যস্ত বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতারা। আর এই সূত্রেই উঠে এসেছে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসার সম্ভাব্য যোগ-সাজোশের তত্ত্বও।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী যদি কোনওভাবেই নিজের অবস্থান পরিবর্তন না করেন, মণিপুর ইস্যুতে নীরব থাকাই শ্রেয় বলে মনে করেন, তাহলে উত্তর পূর্বের হিংসা উপদ্রুত রাজ্যের পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করেছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’৷ সূত্রের দাবি, খুব শীঘ্রই সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে আগে নিজেদের মধ্যে সবিস্তারে আলোচনা করবেন ‘ইন্ডিয়া’ জোটের প্রতিনিধি বিভিন্ন দলের শীর্ষ স্থানীয় সাংসদরা৷ এই মর্মে ঐকমত্য হওয়ার পরই এগোনো হবে কি-না তা নিয়ে নেওয়া হবে যথাযথ সিদ্ধান্ত, সোমবার নয়াদিল্লিতে দাবি জানানো হয়েছে বিরোধী শিবির সূত্রে৷
সংসদীয় রীতি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করতে হলে তা করতে হবে লোকসভায়৷ এই অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে সই করতে হবে কমপক্ষে ৫০ জন সাংসদকে৷ পাটনা এবং বেঙ্গালুরু সামিটের পরে বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের ঐক্য এমন জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে ৫০ জন সাংসদের সাক্ষর জোগার করা কোনও বড় বিষয় নয় বলেই মনে করছে বিরোধী শিবির৷ একবার ৫০ জন সাংসদের সাক্ষর হয়ে গেলে, এই প্রস্তাব গ্রহণ করতে বাধ্য হবেন লোকসভার অধ্যক্ষ৷ সেই ক্ষেত্রে প্রস্তাবের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে সংসদে এসে মুখ খুলতেই হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে৷ এর পরে নিয়ম মেনে ভোটাভুটির মাধ্যমে স্থির করা হবে অনাস্থা প্রস্তাব মান্যতা পাচ্ছে কি না৷ বস্তুত, লোকসভায় বর্তমান সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে সরকারপক্ষ অনায়াসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে সম্ভাব্য অনাস্থা প্রস্তাবকে খারিজ করে দিতে পারবে৷ তারপরেও গোটা দেশের সামনে বিরোধী দলীয় নেতাদের এই সম্ভাব্য পদক্ষেপ এক ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক দৃষ্টান্ত হিসেবে চিহ্নিত হবে৷
উল্লেখ্য, এর আগে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল ২০১৮ সালে৷ সেবার সংখ্যাগরিষ্ঠার জোরে সরকারপক্ষ অনায়াসে অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে জয়ী হয়েছিল৷ তখন অনাস্থার পক্ষে ভোট পড়েছিল ১২৬টি, বিপক্ষে ৩২৫টি৷ অতীতে ২০০৩ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের বিরুদ্ধেও অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়৷ সেই সময়েও সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরেই জয়ী হয়েছিল শাসক শিবির৷ ১৯৬৩ সালে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুকেও অনাস্থা প্রস্তাবের মোকাবিলা করতে হয়েছিল৷ পরবর্তীকালে লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, রাজীব গান্ধী, পিভি নরসিমহা রাও সহ বেশ কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীকে অনাস্থা প্রস্তাবের মুখোমুখি হতে হয়৷ তবে এই প্রধানমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কোনও ইস্যুতে সংসদে মুখ না খোলার জন্য অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করা হয়নি৷ এবার মণিপুর ইস্যুতে সংসদে বিবৃতি না দেওয়ার কারণে বিরোধী জোটের তরফে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসা হলে তা কার্যত নজিরবিহীন হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ।