সন্দীপ সরকার, শিলিগুড়িঃ রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় যে দল থাকে সেই দলকেই ভোটে সমর্থন করেন দুটি বনবস্তির মানুষ। এই দুই বনবস্তি হল জলপাইগুড়ি জেলার ডাবগ্রাম ১ গ্রামপঞ্চায়েতের দুটি গ্রাম লালটং বস্তি ও চমকডাঙ্গী। অতীতের ধারা এবারও অব্যাহত জঙ্গলঘেরা এই দুই প্রত্যন্ত গ্রামে। ইতিমধ্যেই গ্রামপঞ্চায়েতের আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূল। তাই এবার এই দুই গ্রামের বাসিন্দারা ভোট দেবেন পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের আসনে। পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের দেখা না মেলায় নেই কোনও রাজনৈতিক উত্তাপও।
ডাবগ্রাম ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সবচেয়ে প্রত্যন্ত দুই বনবস্তি লালটং ও চমকডাঙ্গী গ্রাম। এই দুই গ্রাম মিলেই একটি বুথ। তবে রাজনৈতীক ও ভৌগলিক কারণে এবারের পঞ্চায়েত ভোটে এই দুই গ্রামের চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। গ্রামদুটি মহানন্দা অভয়ারন্যের ভেতরে তিস্তা নদীর গা ঘেঁষা। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার জঙ্গলের পথ ধরে পৌঁছতে হয় এই দুই গ্রামে। বাম আমলে পঞ্চায়েত ভোটে ছেয়ে থাকত লাল পতাকায়। রাজ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা বদলের পরই সেখানে পরিবর্তন হয়েছে রাজনৈতিক চিত্রটাও। এবারের পঞ্চায়েত ভোটে গ্রাম দুটিতে ছেয়ে রয়েছে ঘাসফুলের পতাকায়। দেখা মেলেনি কোনও বিরোধী দলের ব্যানার বা পোস্টারের। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে তৃণমূলের প্রার্থী ডোমা শেরপা। তবে গ্রামের ভোট হবে শুধুমাত্র পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের আসনে।
কেন লালটং ও চমকডাঙ্গীতে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলকেই সমর্থন? এই প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা নীর কুমার মুখিয়া জানিয়েছেন, বাম আমলে তারা সমর্থন করতেন সিপিএমকে। এখন ক্ষমতায় যেহেতু তৃণমূল তাই তারা তৃণমূলকেই এবছর সমর্থন দিয়েছেন। তাঁর কথায়, জঙ্গলের ভিতরে প্রত্যন্ত গ্রাম হওয়ার কারণে তাঁদের নানান সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। শাসক দলের ছত্রছায়ায় না থাকলে সেই সুযোগ সুবিধা নাও মিলতে পারে। তাই তারা অতীতের ধারাকে অব্যাহত রেখে এবারও গ্রামের মানুষ সর্বসম্মতিক্রমে তৃণমূল প্রার্থীকেই সমর্থন দিয়েছেন। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে গ্রামবাসীদের পছন্দসই প্রার্থীকেই টিকিট দিয়েছে তৃণমূল।
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের লালটং বুথ সভাপতি গৌতম কুমার ছেত্রী জানিয়েছেন, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে গ্রামের অনেক উন্নতি হয়েছে। রাস্তাঘাট, পানীয় জলের ব্যবস্থা হয়েছে। এছাড়াও রাজ্যের যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন দুই প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষজন। উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়েই তৃণমূলকেই সমর্থক করেছেন গ্রামবাসীরা।
তবে বেশ কিছু সমস্যার কথাও জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাদের কথায়, লালটং বস্থিতে এখনও বিদ্যুতায়ণ হয়নি। গ্রামে নেই প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। চিকিৎসা, স্কুল কলেজের জন্য প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দূরে শিলিগুড়ির ওপর নির্ভর করতে হয়ে। নেই পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত। এছাড়া বন্যপ্রাণীদের উপদ্রব রয়েছে।
জানা গিয়েছে, এই দুই বনবস্তির মোট জনসংখ্যা ৮০০। মোট ভোটার ৩৪০। একসময় গ্রামবাসীদের একমাত্র জীবিকা ছিল চাষবাস। গ্রামবাসীদের জমির একটা বড় অংশ চলে গিয়েছে তিস্তার কবলে। ফলে চাষবাস বন্ধ করে পশুপালনকেই বেছে নিয়েছেন জীবিকা হিসেবে। শিক্ষার হারও অনেকটাই কম। ২০১৩ সাল পর্যন্ত লালটং ও চমকডাঙ্গীর পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় ছিল সিপিএম। পরবর্তীতে রাজ্যের শাসন ক্ষমতা বদলের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক চিত্রটাও বদলে যায় দুই প্রত্যন্ত গ্রামে। এবছরও গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীকেই সমর্থন দিয়েছেন। বিরোধী কেউ না থাকায় পঞ্চায়েতের আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন তৃণমূলপ্রার্থী ডোমা শেরপা। দেখা যায়নি কোনও রাজনৈতিক উত্তাপ। নেই সাধারন মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে উন্মাদনাও।