কোচবিহার: নামেই মেডিকেল কলেজ। গালভরা নামের একাধিক বিভাগও রয়েছে। সেখান থেকে সুষ্ঠু স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার কথা রোগীদের। কিন্তু বাস্তবটা অন্যরকম। মেডিকেল কলেজের অন্তর্বিভাগে কার্ডিওলজি, নিউরোলজি, নেফ্রোলজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে চিকিৎসকই নেই। তাই বাধ্য হয়ে ব্যয়বহুল চিকিৎসার জন্য কোচবিহারবাসীকে ভরসা করতে হচ্ছে সেই শিলিগুড়ি অথবা কলকাতার হাসপাতাল, কিংবা বেসরকারি চিকিৎসা পরিষেবার উপরেই।
কোচবিহারে মেডিকেল কলেজ তৈরি হয়েছে পাঁচ বছর আগে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগগুলিতে চিকিৎসক না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ব্যয়বহুল এই বিভাগগুলিতে দ্রুত চিকিৎসক নিয়োগের দাবি উঠেছে। সমস্যা যে রয়েছে, মানছেন রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পার্থপ্রতিম রায়ও। তিনি বলেছেন, ‘কয়েকটি ক্ষেত্রে চিকিত্সকের অভাব রয়েছে ঠিকই। সমস্যার কথা স্বাস্থ্য ভবনে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমস্যা মিটে যাবে।’
এমএসভিপি ডাঃ রাজীব প্রসাদও একই সুরে আশ্বাসের কথাই শুনিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, ‘সুপারস্পেশালিটির বহির্বিভাগে এই বিভাগগুলি চালু রয়েছে। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা পরিষেবা দেন।’
২০১৮ সালে জেলা হাসপাতাল থেকে মেডিকেল কলেজে উন্নীত হয়েছিল এমজেএন হাসপাতাল। তারপর থেকে এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের উপর রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। কোচবিহার জেলা তো বটেই, এমনকি প্রতিবেশী আলিপুরদুয়ার জেলা ও নিম্ন অসমের একটা বড় অংশের বাসিন্দারাও এখান থেকে পরিষেবা পান। শেষ কয়েক বছরে বেডের সংখ্যা বেড়েছে। সেইসঙ্গে পিকু, নিকু, ট্রমা কেয়ার ইউনিট, মাতৃমা সহ নানা বিভাগ খোলা হয়েছে। বর্তমানে এই মেডিকেল কলেজে প্রায় ২০০ জন চিকিৎসক থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেকটাই কম। চিকিৎসকের অভাবে রোগীদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে ব্যয়বহুল চিকিৎসার ক্ষেত্রে। হৃৎপিণ্ড সংক্রান্ত কার্ডিওলজি, কিডনি সংক্রান্ত নেফ্রোলজি, স্নায়ু সংক্রান্ত নিউরোলজির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলিতে স্থায়ী কোনও চিকিৎসক নেই। ফলে এইসব সমস্যা নিয়ে রোগী ভর্তি থাকলে অন্য চিকিৎসকরাই রোগীদের দেখছেন। আর রোগীর অবস্থা বেশি সংকটজনক হলে তাঁদের রেফার করে দেওয়া হচ্ছে।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছিলেন কোচবিহারের বাসিন্দা শুভম রায়। বলেন, ‘আমার এক আত্মীয়কে কিছুদিন আগে পেসমেকার বসাতে হয়েছে। এমজেএন মেডিকেলে কার্ডিওলজির অন্তর্বিভাগ চালু নেই। সেজন্য একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসা করাতে হয়েছে।’
গত বছরই এমজেএন মেডিকেলে ট্রমা কেয়ার ইউনিট চালু করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের সেখানে চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু সেখানে কোনও নিউরোলজির চিকিৎসক নেই। বিভাগে চিকিৎসক থাকলে আরও উন্নত পরিষেবা দেওয়া সম্ভব হত বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
তবে সুপারস্পেশালিটির বহির্বিভাগে কার্ডিওলজি বিভাগে প্রতি মঙ্গলবার ডাঃ সৌমেন নন্দী এবং মাসের প্রথম ও তৃতীয় শনিবার ডাঃ জয়ন্ত ঘোষ রোগীদের দেখেন। নিউরোলজি বিভাগে প্রতি বৃহস্পতিবার ডাঃ সৌমেন কে কুমার এবং প্রথম ও তৃতীয় শুক্রবার ডাঃ গর্গ বসু পরিষেবা দেন। নেফ্রোলজির চিকিৎসক সঞ্জিতকুমার পণ্ডিত প্রতি বুধবার করে রোগী দেখেন। কিন্তু তাঁরা বহির্বিভাগে রোগী দেখলেও অন্তর্বিভাগে দেখেন না। স্বাভাবিকভাবেই কোনও রোগীর সমস্যা গুরুতর হলে তাঁর চিকিৎসার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়।