বিশ্বজিৎ সাহা, মাথাভাঙ্গা: অর্থাভাবে নিজে বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেননি। তবে পচাগর গ্রাম পঞ্চায়েতের ছাট খাটেরবাড়ি এলাকার অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলির শিশুরা যাতে স্কুলছুট না হয় এবং পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য গত তিন দশক ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন মিনু বেগম (৫৭)। কোচবিহারের (Cooch Behar) মাথাভাঙ্গা (Mathabhanga) শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের একটি প্রাথমিক স্কুলের মিড-ডে মিলের রান্নার সেলফ হেল্প গ্রুপের সদস্যা মিনুর কাজই হল শহর লাগোয়া ছাট খাটেরবাড়ি এলাকায় ঘুরে ঘুরে স্কুলছুট শিশুদের স্কুলে পাঠানো, তাদের রেশন কার্ড, জন্মশংসাপত্র সহ সমস্ত কাগজপত্র বের করার ক্ষেত্রে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করা। পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকার শিশুদের প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা পড়ান মিনু।
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা এলাকার খুদে পড়ুয়াদের পড়িয়ে যাচ্ছেন মিনু। পড়ানোর উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় একেকদিন একেক বাড়ির উঠোনে কিংবা বারান্দায় চলে তাঁর ক্লাস। মিনুর স্বামী মারা গিয়েছেন। ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার করছেন। দরিদ্র মৎস্যজীবী অধ্যুষিত ছাট খাটেরবাড়ি গ্রামের ছোট ছোট পড়ুয়াদের নিয়েই যেন মিনুর সংসার। তাঁর কথায়, ‘বিয়ের আগে জোরপাটকি হাইস্কুলে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। ইচ্ছে ছিল আরও লেখাপড়া করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার। তবে অর্থাভাবে তা সম্ভব হয়নি। ছাট খাটেরবাড়ি মৎস্যজীবী এলাকার শিশুরা যাতে স্কুলছুট না হয় এবং পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য এলাকার কয়েকজন আমায় বলার পর থেকেই তাদের নিয়ে ভাবতে শুরু করি। তারপর দেখতে দেখতে তিন দশক হয়ে গেল, ওদের নিয়েই আছি।’
প্রাথমিক স্তরের শিশুদের পড়ানোর পাশাপাশি তারা যাতে স্কুলছুট না হয় সেজন্য অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন মিনু। হাইস্কুলগুলি এলাকা থেকে দূরবর্তী হওয়ায় এবং অভিভাবকরা সচেতন না হওয়ায় তাদের স্কুলে ভর্তির ফর্ম সংগ্রহ, ফর্ম ফিলাপ এবং স্কুলে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করার কাজও তিনি করে আসছেন। পিছিয়ে পড়া এলাকার শিশুরা স্কুলমুখী হচ্ছে এটা ভেবে মানসিক শান্তি পান মিনু।
খুদে পড়ুয়া রাজকান্ত দাস, দিয়া চক্রবর্তী, লক্ষ্মী দাস, সন্ধ্যাবালা দাস, নন্দিনী দাস, রিংকি দাসদের মতো ছাট খাটেরবাড়ির জনা পঁচিশেক প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াকে পড়াশোনার জন্য নিয়মিত হাজিরা দিতে হয় মিনু দিদিমণির কাছে। স্থানীয় বাসিন্দা তারামোহন দাস, রুইদাস দাসরা জানিয়েছেন, মিনু বেগমের চেষ্টায় এলাকার শিশুরা একদিকে যেমন স্কুলমুখী হচ্ছে, তেমনি পড়াশোনায় তাদের উৎসাহ এসেছে। পচাগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কল্যাণী রায় বলেন, ‘মিনু বেগমের কথা শুনেছি। প্রত্যন্ত এলাকায় শিশুরা যাতে স্কুলছুট না হয় সেজন্য তাঁর উদ্যোগ প্রশংসনীয়।’