নাগরাকাটা: শুধু সংগঠিত ক্ষেত্রেই নয়, সমস্ত চা বাগানে একই হারের বর্ধিত মজুরি দিতে হবে। ইতিমধ্যেই শ্রম দপ্তরের তরফে আগের অ্যাডভাইজারি (Advisory) সংশোধন করে এমন কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে শ্রম দপ্তর (Labor Department) নির্ধারিত মজুরির পরিমাণ ২৫০ টাকা। সংগঠিত বা বড় বাগানের ক্ষেত্রে তা চালু হলেও ছোট, মাঝারি, প্রোজেক্ট ও নতুন বাগানগুলি তার আওতায় নেই। সংশোধিত অ্যাডভাইজারির ফলে ওই ক্যাটিগোরির (Category) বাগানগুলিও এই নির্দেশিকার আওতায় চলে এল বলে সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে। উত্তরবঙ্গে এধরনের অন্তত ৩০০০ বাগানে ৫০ হাজার শ্রমিক রয়েছেন বলে প্রাথমিক হিসেব। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টিকে স্বাগত জানাচ্ছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। তবে ওই ২৫০ টাকা হারের মজুরি তাদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিচ্ছে ছোট বাগানের বিভিন্ন সংগঠন।
এর আগে গত ২৭ এপ্রিল শ্রম দপ্তর থেকে একটি অ্যাডভাইজারি জারি করে সংগঠিত ক্ষেত্রের চা বাগান শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২৩২ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫০ টাকা করার কথা বলা হয়। রাজ্যের অ্যাডভাইজারিকে চ্যালেঞ্জ (Challenge) করে মালিকদের একাংশ কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করলেও তা টেকেনি। ১ অগাস্ট মামলাটিকে খারিজ করে দেয় বিচারপতি রাজা বসু চৌধুরীর সিঙ্গল বেঞ্চ। এরপর গত বছরের জুন মাস থেকে এরিয়ার সহ বর্ধিত হারের মজুরি বড় বাগানগুলিতে চালু হয়ে যায়। ২৭ এপ্রিলের অ্যাডভাইজারিতে শুধু সংগঠিত ক্ষেত্রের বাগানের কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকায় ছোট বাগানের শ্রমিকরা এর ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন- এমন অভিযোগে শ্রমিক সংগঠনগুলি (Labor Union) সরব হয়েছিল।
বর্তমানে আয়তনে ২৫ একরের বেশি এমন ছোট, নতুন, প্রোজেক্ট (Project) বাগানগুলিতে একেক স্থানে একেক ধরনের মজুরি চালু আছে। যেমন চা বণিকসভা আইটিপিএ’র স্মল অ্যান্ড নিউ টি গার্ডেন ফোরামের ১২০টি বাগানে ২০২ টাকা মজুরি দেওয়া হচ্ছে। এপ্রিল থেকে তা ২১২ টাকা হওয়ার কথা। ওই ফোরামের (Forum) আহ্বায়ক জয়ন্ত কর বলেন, ‘সরকার হয়তো কিছু একটা ভেবে অ্যাডভাইজারি সংশোধন করেছে। তবে আমাদের বাগানগুলিতে কোথাও ফ্যাক্টরি নেই। কাঁচা পাতা বিক্রি করেই চলে। এতদিন এ ধরনের কোনও নির্দেশিকার আওতায় আমরা ছিলাম না।’ নর্থ বেঙ্গল টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের বাগানগুলিতে এখন মজুরির হার ১৯৩ টাকা। সভাপতি ভজহরি ভৌমিক বলেন, ‘কাঁচা পাতার দাম তলানিতে। ওই হারে মজুরি দিতে গেলে সব বাগান বন্ধ হয়ে যাবে।’ জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের বাগানগুলি ২৫ একরের কম। সরকারি স্বীকৃতি নেই। তাহলে সরকার নির্ধারিত মজুরি দেওয়ার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে।’ উত্তরবঙ্গ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চা চাষি সমিতির সভাপতি রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘বড় বাগান যা পারবে তা আমাদের পক্ষে অসম্ভব।’
পালটা যুক্তি দিচ্ছে শ্রমিক সংগঠনগুলিও। চা শ্রমিক জয়েন্ট ফোরামের অন্যতম শীর্ষ নেতা জিয়াউল আলম বলেন, ‘শুধু শ্রমিক বঞ্চনাই নয়। চা শিল্পের কাঠামোগত পরিবর্তন রুখতেও এটা জরুরি ছিল। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আগে শুধু সংগঠিত ক্ষেত্রের বাগানের কথাই বলা হয়েছিল।’ তৃণমূল চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নকুল সোনার বলেন, ‘এব্যাপারে শ্রম দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। তা মান্যতা পাওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট।’