মোস্তাক মোরশেদ হোসেন, বীরপাড়া: চিতাবাঘ ধরতে পাতা খাঁচায় রাখতে হবে টোপ। টোপ বলতে একটি ছাগল। কিন্তু টোপ আনবে কে? কাজেই বীরপাড়া চা বাগানে ফাঁকাই পড়ে রয়েছে বন দপ্তরের পাতা খাঁচা। এক সপ্তাহ ধরে অধরা ‘খুনি’ চিতাবাঘ। ১০ জানুয়ারি ১৪ নম্বর সেকশনে উদ্ধার হয় রমন লাইনের বাসিন্দা প্রতীক্ষা ওরাওঁয়ের খুবলে খাওয়া মৃতদেহ। সেদিন রাতেই ওই সেকশনে চিতাবাঘ ধরতে খাঁচা পাতে বন দপ্তর। তবে টোপ ছাড়া শূন্য খাঁচায় কি আর চিতাবাঘ ঢোকে!
মৃত ৯ বছর বয়সি প্রতীক্ষা মামাবাড়িতে থাকত। তার মামা ভীম ওরাওঁয়ের বাড়িতে মঙ্গলবার যান মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গা। মনোজের কথায়, ‘চিতাবাঘের হানা রুখতে বন দপ্তর উপযুক্ত পদক্ষেপ করছে না। খাঁচায় টোপ না রাখলে কোনওদিনই চিতাবাঘ খাঁচাবন্দি হবে না। অথচ দেখা যাচ্ছে এখানে লোকদেখানো একটি খাঁচা এনে ফেলে রাখা হয়েছে। টোপ দেওয়া হয়নি। বন দপ্তরের গা ছাড়া মনোভাবের পরিবর্তন না হলে আমরা আন্দোলনে নামব।’ প্রসঙ্গত, এর আগেও মাদারিহাট-বীরপাড়া ব্লকে চিতাবাঘের আক্রমণে মানুষের মৃত্যুর পর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছিলেন মনোজ। আখেরে কোনও পদক্ষেপই করেননি।
প্রশ্ন হল, বন দপ্তরের পাতা খাঁচায় টোপ হিসেবে ছাগল দেবে কে! এলাকার রৌণক বরার কথায়, ‘ছাগলটির মৃত্যু হলে সেটির দাম কি আদৌ বনদপ্তর দেবে? এছাড়া চিতাবাঘ ধরার দায়িত্ব বন দপ্তরের। সংশ্লিষ্ট দপ্তর খাঁচা দিলে ছাগল দিচ্ছে না কেন?’ একই বক্তব্য এলাকার অন্য বাসিন্দাদেরও। এদিকে, জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারী বন্যপ্রাণ সংরক্ষক নভোজিৎ দে’র বক্তব্য, ‘খাঁচায় ছাগল রাখা হলেও সেটির প্রাণহানি হয় না। এছাড়া বন দপ্তরের পক্ষে ছাগল কেনা সম্ভব নয়। সর্বোপরি চা বাগানে খাঁচা পাতা হলে টোপ হিসেবে ছাগল জোগানোর দায়িত্ব মালিকপক্ষের। এনিয়ে অনেক আগেই মালিকপক্ষের সংগঠনের সঙ্গে বন দপ্তরের চুক্তিও হয়েছে।’
বন দপ্তর সূত্রের খবর, চিতাবাঘ ধরতে পাতা খাঁচায় সাধারণত স্থানীয়রাই টোপ জুগিয়ে থাকেন। এটাই ‘প্রথা’। খাঁচার একটি প্রকোষ্ঠে ছাগল রাখা হয়। আরেকটি প্রকোষ্ঠের দরজা খোলা থাকে। ছাগল ধরার আশায় খোলা দরজা দিয়ে প্রকোষ্ঠে ঢুকতেই দরজাটি বন্ধ হয়ে যায়। তাই ছাগলের প্রাণহানির কোনও আশঙ্কা থাকে না। এদিকে, রবিবার রাতে ফের এলাকায় চিতাবাঘ দেখা গিয়েছে বলে জানান স্থানীয় দিলীপ বরা। এতে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
রমন লাইন ঘেঁষেই ১৪ নম্বর সেকশন। ওই সেকশনের বিরাট অংশে চা গাছ নেই। ওই অংশটি কয়েক বছর ধরে ঝোপঝাড়ে ঢাকা। ঝোপঝাড়ে বেশ কয়েকটি চিতাবাঘ ঘাঁটি গেড়েছে, দাবি স্থানীয়দের। পাশেই দলগাঁও চা বাগান। দলগাঁও চা বাগানে লাগাতার মানুষের ওপর হামলা চালাচ্ছে চিতাবাঘ। দলগাঁও ও বীরপাড়া চা বাগানের মধ্যে যাতায়াত করছে চিতাবাঘগুলি, সন্দেহ স্থানীয়দের।