রায়গঞ্জ: সামনেই দীপাবলি। আলোর উৎসবে মাটির প্রদীপ তৈরিতে ব্যস্ত রায়গঞ্জের সুভাষগঞ্জের মৃৎশিল্পীরা। তবে তাঁদের তৈরি মাটির প্রদীপের চাহিদা নেই, তাই তাঁরা মেশিনের প্রদীপ তৈরিতে যুক্ত হয়ে পড়েছে। মেশিনের তৈরি প্রদীপ সারা বছরই চাহিদা থাকে,তাই সারা বছর কাজ মেলে। সেই প্রদীপ চলে যায় মহারাষ্ট্র, মুম্বই, কলকাতা, দিল্লি সহ ভিন রাজ্যে ও ভিন দেশে। এমনকি আমেরিকাতেও যায় এখানকার প্রদীপ।
একদিকে চিনা বৈদ্যুতিক মোমবাতি, এলইডি ও রাইস ল্যাম্পের বাড়াবাড়ি। অন্যদিকে, সর্ষের তেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় প্রদীপের চাহিদা নেই বললেই চলে। কিন্তু ভিন রাজ্যে যথেষ্ট চাহিদা থাকায় সারা বছর প্রদীপ তৈরি হয় সুভাষগঞ্জের মদন সাহার কারখানায়। এলাকার ২২ জন মহিলা মৃৎশিল্পী কারখানায় কাজ করেন। তবে মাটি মাখানো থেকে শুরু করে প্রদীপ তৈরি, রং করা সব কিছুই মেশিনে হয়। প্রদীপ তৈরির জন্য পাঁচটি মেশিন রয়েছে কারখানায়। এছাড়া সারাবছর ফুলের টব, হাড়ি,পাতিল সব কিছু তৈরি হয় এখানে।
তবে এখানকার শিল্পীরা সারা বছর কাজ করলেও বছরে একবার পারিশ্রমিক পান। কারখানার মালিকের ছেলে সুমিত সাহা বলেন, ‘আমাদের এখানকার যাবতীয় প্রদীপ, টব সহ যাবতীয় সরঞ্জাম মহারাষ্ট্রে পাঠানো হয়। সারা বছর প্রদীপ তৈরি হয়। দশ চাকার ২৭ লরি প্রদীপ মহারাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছে। বাকি প্রদীপ বিহার সহ আমাদের জেলার বিভিন্ন ব্লকে ও আশেপাশের এলাকায় দেওয়া হচ্ছে। আমাদের প্রদীপের যথেষ্ট চাহিদা থাকায় আশেপাশের যারা এতদিন হাতে প্রদীপ তৈরি করতেন তারা এখন আমাদের কারখানায় কাজ করেন। সারা বছর প্রদীপের কাজ হয়, তবে কালীপূজোর আগে সবাইকে তাদের পারিশ্রমিক মিটিয়ে দেওয়া হয়। সমস্যায় পড়লে সাহায্য করে থাকি।‘
মৃৎশিল্পী বাসন্তী সরকার বলেন, ‘বছর খানেক হল এখানে কাজ করি।প্রদীপ রং সহ প্যাকেট করে থাকি। যে টাকা পাই তা দিয়ে চলে না, কিন্তু তাও করতে হয়। আমাদের হাতের তৈরি প্রদীপের চাহিদা নেই, সবাই এখন মেশিনের প্রদীপের দিকে ঝুঁকছে।‘
কারখানার আরেক মৃৎশিল্পী মমতা রাণী পাল বলেন, ‘দুই বছর ধরে এখানে কাজ করছি। প্রতিদিন ১০০ টাকার কাজ হয়।সারা বছর কাজ করে থাকি, কিন্তু পারিশ্রমিক পাই বছরে একবার। সরকার থেকে কোনও ভাতা পাই না। তাই খুব কষ্টে চলে সংসার।‘