তমালিকা দে, শিলিগুড়ি: নেই মিড-ডে মিলের রান্নাঘর। অগত্যা শৌচালয়ের সামনে বসেই খুদে পড়ুয়াদের জন্য মিড-ডে মিলের খাবার রান্না করা হচ্ছে। এই ছবি জগদীশচন্দ্র বিদ্যাপীঠ প্রাথমিক স্কুলের। শহরের একটি এত পুরোনো স্কুলে শিশুদের খাবার-দাবার নিয়ে এতটা গাফিলতি কেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে এর আগে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও সদুত্তর মেলেনি।
শুধু শিশুদের মিড-ডে মিল খাওয়ানোই নয়। সেই খাবার কতটা স্বাস্থ্যকরভাবে রান্না করা হচ্ছে বা পরিবেশন করা হচ্ছে, সেদিকেও নজর নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে শিক্ষা দপ্তরের তরফে। এমনকি, পড়ুয়াদের রান্না যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গায় হয়, সেজন্য রান্নাঘরের পাশাপাশি খাওয়ার ঘর তৈরিরও নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু দুটোর কোনওটাই দেখা যাবে না উত্তর ভারতনগরের এই প্রাথমিক স্কুলে। এভাবে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে স্কুলে মিডে-ডে মিল রান্না করা হচ্ছে কেন? প্রশ্ন করায় স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা প্রিয়া সরকার বলেন, ‘স্কুলে মিড-ডে মিল তৈরির ঘরের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা রয়েছে। বিষয়টি স্কুলের তরফে সংসদেও জানানো হয়েছে।’
শিলিগুড়ির উত্তর ভারতনগরে ১৯৬৩ সালে এই প্রাথমিক স্কুলটি চালু হয়। বর্তমানে স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত মোট ২৩৬ জন পড়ুয়া রয়েছে। স্কুলে মিড-ডে মিল রান্না করার জন্য ঘর নেই। ফলে শৌচালয়ের সামনে রান্নার সামগ্রী পেতে রান্না করা হচ্ছে। এতে রান্নার সময় কোনও পড়ুয়া শৌচালয় গেলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাহারা দিতে হয়। একটা সরকারি স্কুলে পরিকাঠামোর এই হাল হলে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়বে কী করে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকরা। স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর মা বলেন, ‘অনেকবার বিষয়টি নিয়ে আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানিয়েছি। যেখানে শিক্ষা দপ্তরের তরফে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে মিড-ডে মিল খাওয়ানোর কথা বারবার বলা হচ্ছে, সেখানে এই স্কুলের এই হাল কেন?’
অভিভাবকদের এই অভিযোগের ভিত্তিতে স্কুলের শিক্ষক সুব্রত ভৌমিক বলেন, ‘আমরা স্কুলে পড়ুয়াদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অনেকভাবে চেষ্টা করছি। মিড-ডে মিল রান্নার ঘর তৈরির জন্যও আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।’
মিড-ডে মিল প্রকল্প চালু হওয়ার এতবছর কেটে যাওয়ার পরেও শিলিগুড়ি শিক্ষাজেলার আওতায় থাকা এই স্কুলটির এই দশা নিয়ে তাই ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান দিলীপকুমার রায়ের আশ্বাস, ‘স্কুলটিতে যাতে অবিলম্বে মিড-ডে মিল রান্নার ঘর তৈরি হয়, সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’