সুভাষ বর্মন, শালকুমারহাট: পাকা রাস্তা থেকে পাথর বিছানো দেড় কিমি পথ গেলেই জঙ্গল শুরু। আর জঙ্গলের পথে প্রথমেই পেরোতে হয় সনজয় নদী। পাকা সেতু নয়। বেহাল একটি কাঠের সেতুই ভরসা৷ তারপর মেঠোপথ ধরে আরও ৫০০ মিটার যেতেই শালকুমারহাটের রাভা বনবস্তি।
সাতসকালে ছোট্ট একটি মুদির দোকানের সামনেই আড্ডায় বসেছেন কয়েকজন। চর্চা হচ্ছে ভোট নিয়েই। সমস্যার কথা জানাতে চান সবাই। শালকুমারহাট হয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের প্রার্থীর প্রচার হয়েছে। তবে এখনও ভোট চাইতে বস্তিতে কেউ আসেননি। গত পাঁচ বছরে সাংসদেরও দেখা মেলেনি। তপশিলি উপজাতি কেন্দ্র হলেও বনবস্তি এড়িয়ে ঘাসফুল ও পদ্মফুলের প্রচার চলায় হতাশ রাভারা।
তখনও লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়নি৷ গত ১১ মার্চ শালকুমারহাটে ভোটের প্রচারে এসেছিলেন বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গা। শতবর্ষপ্রাচীন কার্জি পরিবারের কালী মন্দিরে পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করেছিলেন মনোজ। শালকুমারহাটের পাকা রাস্তা দিয়েই মনোজের প্রচার কনভয় যাতায়াত করে। একইভাবে গত সোমবার ওই কালী মন্দিরেই পুজো দিয়ে প্রচার শুরু করেন তৃণমূলের প্রার্থী প্রকাশ চিকবড়াইকও। প্রকাশেরও হুডখোলা গাড়ি পাকা রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে। অর্থাৎ প্রার্থী নিয়ে উভয় দলই রাভা বস্তি এড়িয়েই প্রথম দফার প্রচার সেরেছে৷
বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়েই আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্র। তাই পরে প্রার্থীরা দ্বিতীয় দফায় শালকুমারহাটের রাভা বনবস্তিতে প্রচারে আসার সুযোগ পাবেন কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যদিও দ্বিতীয় দফায় বস্তিতে প্রচারের আশ্বাস দিয়েছে দুই শিবিরই। তৃণমূলের আলিপুরদুয়ার-১ ব্লক সভাপতি তুষারকান্তি রায়ের কথায়, ‘দ্বিতীয় ধাপের প্রচারে অবশ্যই রাভা বস্তিতে প্রার্থীকে নিয়ে যাওয়া হবে।’ বিজেপির ২ নম্বর মণ্ডল সভাপতি রতন রায়ের বক্তব্য, ‘আমাদের প্রার্থীও ওই বনবস্তিতে প্রচারে যাবেন।’ গত পাঁচ বছর সাংসদের সঙ্গে রাভাদের দেখা না হওয়া প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে এই লোকসভা কেন্দ্র। বাড়ি বাড়ি তো সাংসদের যাওয়া সম্ভব নয়। দেখাটা বড় কথা নয়, কাজই মূল। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন সহযোগিতা করেনি।’
কী কী সমস্যা তুলে ধরতে চান রাভারা? তাঁদের দাবি, কাঠের সেতুটি পাকা করা হোক। এছাড়া কর্মসংস্থানের অভাব রয়েছে। বস্তির কেউ সরকারি চাকরি করেন না। একশোদিনের কাজ বন্ধ। আগে কাজ চান রাভারা। সদ্য জেলা প্রশাসন জমির খতিয়ান দিয়েছে। এর আগে পাট্টা পেয়েছিলেন বস্তিবাসী। কিন্তু পাট্টা ও খতিয়ানের জমির হিসেবে মিল নেই। বস্তির আড্ডায় এসব নিয়েই কথা হচ্ছিল।
কুমার রাভার কথায়, ‘এসব সমস্যা ও দাবির কথাই তো প্রার্থীদের আমরা জানাতে চাই। গত পাঁচ বছর তো সাংসদের দেখা মেলেনি।’