চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার: ২৭৩ কোটি টাকা খরচ করে ডুয়ার্সের রেলপথে বৈদ্যুতিকরণ করেছে রেল (Rail)। অথচ সেখানে দুটোর বেশি ট্রেন (Train) চালাতে পারছে না রেল। কারণ, যে সাব-স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ার কথা সেগুলি তৈরি হয়নি। তাই সেখানে বেশি করে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনে যাত্রীবাহী ট্রেন চলানো যাচ্ছে না।
বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য নিউ মাল জংশনে ও মাদারিহাটে দুটি সাব-স্টেশন তৈরি হওয়ার কথা ছিল। রেলের পক্ষ থেকে সাব-স্টেশন বসানোর কাজের দায়িত্ব রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানিকে দেওয়া হয়। নিউ মাল জংশনের সাব-স্টেশন তৈরির জন্য সবমিলিয়ে ৫১টি টাওয়ার বসার কথা ছিল। এর মধ্যে ৪৫টি টাওয়ার বসলেও রাজা টি স্টেট নামে একটি চা পাতা বাগান এলাকার মধ্যে ছ’টি টাওয়ার বসার কথা ছিল। সেখানে জমি সমস্যায় কাজটি আটকে গিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের (Administration) সঙ্গে কয়েকবার বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির আলোচনা হলেও তা মেটানো সম্ভব হয়নি। ফলে থমকে গিয়েছে সাব-স্টেশন তৈরির কাজ।
অন্যদিকে, মাদারিহাটে সাব-স্টেশন করার জন্য যে টেন্ডার করা হয় তাতে টেন্ডারের কাজের বরাদ্দ নিয়ে কিছু সমস্যা থাকায় টেন্ডার সম্পূর্ণ হচ্ছে না। ফলে সেখানে সাব-স্টেশন তৈরির কাজ বিশবাঁও জলে। আর সবমিলিয়ে বিদ্যুতের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় বৈদ্যুতিকরণ হলেও ডুয়ার্সে সেভাবে ট্রেন চলছে না।
এই সমস্ত বিষয়টি নিয়ে রাজ্যে ও রেলের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই সমস্যা সমাধানে রেলকে মাঠে নামতে চিঠি করেছে বৈদ্যুতিকরণের কাজ করা ইরকন সংস্থা। যদিও রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডিভিশনাল কমার্সিয়াল ম্যানেজার অঙ্কিত গুপ্তা জানান, সাব-স্টেশনের সংখ্যা বাড়লে ট্রেনের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
রেল সূত্রে খবর, শামুকতলা থেকে শিলিগুড়ি জংশন পর্যন্ত ১৯৩.৩৭ কিমি রেলপথে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রেল। সেই হিসেবে ইরকন সংস্থা কাজটি করে। তারা ২০২৩ সালের মে মাস নাগাদ কাজটি শেষ করে। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে সেখানে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানো শুরু করা হয়।
এরমধ্যে মহানন্দা এক্সপ্রেস ও কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ছাড়া অন্য কোনও বৈদ্যুতিক ইঞ্জিনে ট্রেন চালানো যাচ্ছে না। আর এই দুটো ট্রেন চালাতে পুণ্ডিবাড়ি ও রাঙ্গাপানি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে।
নদী, পাহাড়, জঙ্গল ঘেরা এই রেলপথে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে ডিজেল ইঞ্জিনের ট্রেন থেকে ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনে ট্রেন চললে তাতে দূষণ কমবে। সেক্ষেত্রে এখানে বন ও অরণ্যের ভারসাম্য ঠিক রাখার পাশাপাশি বন্যপ্রাণীদের ক্ষেত্রেও তা সবদিক থেকে ভালো হবে।