ঘোকসাডাঙ্গা: ব্যবসায়ীর দেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল মাথাভাঙ্গা ২ ব্লকের লতাপাতা গ্রাম পঞ্চায়েতে। সোমবার পুঁটিমারী বাজার সংলগ্ন সাউদেরবস এলাকায় উদ্ধার হয় দুলাল বিশ্বাস (৩৫) নামে ওই ব্যবসায়ীর দেহ। খবর পেয়ে ঘোকসাডাঙ্গা পুলিশ পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তির শরীরে তেমন কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। তবে ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পরই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, দুলালবাবু তৃণমূলের সমর্থক ছিলেন। তাঁকে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা খুন করেছে। এই অভিযোগ তুলে এদিন ঘোকসাডাঙ্গা থানায় বিক্ষোভ দেখিয়ে দোষীদের শাস্তির দাবি জানান তৃণমূল নেতৃত্ব। উত্তেজনা থাকায় এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ বাহিনী। চলছে টহলদারি। অন্যদিকে, অভিযোগ অস্বীকার গোটা ঘটনার তদন্ত দাবি করেছেন বিজেপি বিধায়ক সুশীল বর্মন। তবে মৃতের মার বক্তব্য, তাঁর ছেলে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুঁটিমারি বাজারে ফাস্ট ফুডের দোকান চালাতেন দুলাল বিশ্বাস। বাড়িতে রয়েছে মা আরতি বিশ্বাস, স্ত্রী আন্না সরকার আর সাত বছরের ছেলে রামু। অন্য দিনের মতো রবিবারও দোকান খুলেছিলেন দুলাল। গতকাল দুপুরে তৃণমূল প্রার্থী বালিকা মজুমদারের জয়ের সুবাদে এলাকায় বিজয় মিছিল বের করা হয়েছিল। জয়ের আনন্দে গতকাল রাতে বালিকা মজুমদারের বাড়িতে মাংস-ভাতের ব্যবস্থা করা হয়। আরতি বিশ্বাস বলেন, ‘গতকাল দোকান বন্ধ করে স্থানীয় পঞ্চায়েতের বাড়িতে রাতে খেতে যায় দুলাল। রাত বাড়লেও সে বাড়ি না ফেরায় বউমা ও নাতিকে সঙ্গে নিয়ে খুঁজতে বের হই। অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরেই রাস্তার ওপর দুলালকে পড়ে থাকতে দেখি।’
পরিবারের লোকজনের চিৎকার শুনে সেখানে আসেন প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে ঘোকসাডাঙ্গা থানার পুলিশ। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। আরতি বিশ্বাস জানান, প্রায় আড়াই-তিন মাস আগে প্রতিবেশী দীনেশ রায় ও প্রাণেশ রায়ের সঙ্গে একটি বিষয় নিয়ে বিবাদ হয়েছিল। সেই সময় দুপক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে। দীনেশ ও প্রাণেশ এলাকায় বিজেপি সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তাঁরা বিবাদের পর দেখে নেওয়া ও প্রাণে মারার হুমকিও দিয়েছিলেন বলে দাবি দুলালের মার।
এদিকে, ঘটনায় রাজনৈতিক রং লাগতে শুরু করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক (হিপ্পি) সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন, ‘তৃণমূল কর্মী খুন বিজেপির দুষ্কৃতীদের হাতে।’ সোমবার বিকেলে তিনি মৃতের বাড়িতেও যান। এদিন তৃণমূল যুব সভাপতি কমলেশ অধিকারী, দলের ব্লক সভাপতি প্রদীপরঞ্জন রায়ের নেতৃত্বে দুলালকে তৃণমূল কর্মী বলে দাবি করে ঘোকসাডাঙ্গা থানার সামনে বিক্ষোভ দেখানো ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে।
এবিষয়ে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি প্রদীপরঞ্জন রায় বলেছেন, ‘দুলাল বিশ্বাস আমাদের দলের কর্মী। ঘটনার তদন্ত দাবি করে আন্দোলনে নেমেছি আমরা।’ অন্যদিকে, মাথাভাঙ্গার বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা সুশীল বর্মনের বক্তব্য, ‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। দুলাল ফাস্ট ফুড বিক্রেতা ছিলেন। তাঁর মৃত্যু নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নোংরা রাজনীতি শুরু করেছে। আমরাও দাবি করছি পুলিশ পুরো ঘটনার তদন্ত করে সত্যিটা প্রকাশ্যে আনুক।’
মাথাভাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত ভার্মা জানিয়েছেন, এক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়েছে। শরীরে তেমন কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।