চাঁদকুমার বড়াল, কোচবিহার : হাতে আর ছ’টা দিন, তার ওপর পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শেষ ছুটির দিন। তাই রবিবার কোচবিহারে তেড়েফুঁড়ে প্রচারে নেমেছিলেন প্রার্থীরা। কিন্তু ভোট নিয়ে কোনও তাপ-উত্তাপই যেন নেই লিপিকা রাজভরের। রবিবারও মাঠে তিনি ধানের বিছন পোঁতার কাজ করছেন, কারণ কাজ না করলে তাঁর রুটিরুজিতে টান পড়বে। এতদূর পড়লে মনে হবে, এমন তো কত মানুষই রয়েছেন। কিন্তু লিপিকার গল্পটা একটু আলাদা। কারণ লিপিকা এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী। কোচবিহার-১ ব্লকের পানিশালা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭৬ নম্বর বুথে তাঁকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। প্রচারে যাবেন না? উত্তরে লিপিকা জানালেন, সকালে কাজ সেরে নিচ্ছেন। বিকেলে প্রচারে বেরোবেন।
রাজ্যের শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ভূরিভূরি অভিযোগ। অনেকে জেলে রয়েছেন। তৃণমূলের মাঝারি-ছোট নেতাদেরও কয়েক বছরে ঝড়ের গতিতে সম্পত্তি বেড়েছে। তারমধ্যেই যেন ব্যতিক্রমী ছবি পানিশালায়। একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের গৃহবধূকে তৃণমূল প্রার্থী করায় এলাকায় চর্চা চলছে।
কোচবিহার-দিনহাটা রাজ্য সড়কের মাঝে পানিশালা। রাজ্য সড়ক থেকে একপাশে চলে গিয়েছে মাটির রাস্তা। কিছুটা এগোনোর পর কয়েকজনকে লিপিকার কথা জিজ্ঞাসা করায় তাঁরা দেখিয়ে দিলেন যে প্রার্থী এখন জমিতে কাজ করছেন।
টিনের বাড়ি, মাটির মেঝে। বাড়িতে স্বামী, দুই সন্তান ও শাশুড়ি রয়েছেন। স্বামী বিভিন্ন জায়গায় দিনমজুরির কাজ করেন। সংসার চালাতে তাই অন্যের জমিতে কাজ করেন লিপিকা। ‘অন্যের জমিতে কাজ করে পড়াশোনা করাচ্ছি। মেয়ে এখন টুয়েলভে পড়ে, ছেলে নাইনে’, বললেন তিনি।
বাড়ির এমন অবস্থা কেন? আবাস যোজনার ঘর পাননি? লিপিকার উত্তর, ‘নামই তো নেই, ঘর পাব কোথা থেকে?’ ফের ফিরে এল প্রচারের প্রসঙ্গ। তাঁর বক্তব্য, ‘এলাকার মানুষ চাইছিল। তাই ভোটে দাঁড়ালাম। ক’দিন ধরে প্রচারে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু তার জন্য কাজ করতে পারছিলাম না। তাতে সংসার চালাতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই এদিন সকালে হাতে হাতে কিছুটা কাজ করছিলাম। বিকেলে সকলে মিলে প্রচারে বেরোব।’
ভোটে তো লড়ছেন। জিতলে কী করবেন? লিপিকার মুখে উন্নয়নের কথা। সাফ বলছেন, ‘এলাকায় উন্নয়ন করাই লক্ষ্য হবে। এছাড়া মানুষের পাশে থাকতে চাই।’ ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানালেন, এলাকার কাঁচা রাস্তা পাকা করতে চান। এলাকার পানীয় জলের আরও ভালো ব্যবস্থা করাও লক্ষ্য থাকবে। এছাড়া সারা বছর যাতে এলাকার বাসিন্দারা কাজ পান, সেটাও দেখবেন তিনি।
কথা শেষ করেই সংসারের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন লিপিকা। হাতের কাজ সব সেরে ফেলতে হবে। বিকেলে আবার প্রচারে বেরোতে হবে তো।