উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গে পুর নিয়োগ সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে নিল রাজ্য সরকার। কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য। সোমবার শীর্ষ আদালত থেকে মামলাটি তুলে নেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার শীর্ষ আদালত থেকে প্রত্যাহার করা হল পুর নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা।
গত ১৯ মার্চ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অয়ন শীলকে গ্রেপ্তার করেছিল ইডি। অয়নের সল্টলেকের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে রাজ্যের একাধিক পুরসভার বিভিন্ন পদে চাকরিপ্রার্থীদের ওএমআর শিট (উত্তরপত্র) পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছিল ইডি। ইডি সূত্রে এ-ও জানা যায়, জেরায় অয়ন তদন্তকারীদের জানিয়েছেন যে, বিভিন্ন পুরসভায় চাকরি পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে তিনি মোট ২০০ কোটি টাকা তুলেছিলেন। এর পরেই সামনে আসে পুরসভার নিয়োগ দুর্নীতি।
এর পরেই পুর নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পরে বেঞ্চ বদলে মামলাটি যায় বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে। সেখানেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায়ই বহাল রাখা হয়। সিঙ্গল বেঞ্চের সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল রাজ্য। সেখানে মামলা চলাকালীন রাজ্যের তরফে সুপ্রিম কোর্টেও স্পেশাল লিভ পিটিশন (এসএলপি) দায়ের করে। কিন্তু রাজ্য ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের আগেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে শুনে অসন্তুষ্ট হন বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী। আদালতে রাজ্যকে ভর্ৎসনাও করা হয়। বিপাকে পড়ে সেই সময় রাজ্যের তরফে শীর্ষ আদালত থেকে মামলাটি তড়িঘড়ি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এবং সুপ্রিম কোর্টে প্রত্যাহারের পরই মামলাটি শোনে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু তারাও সিবিআই তদন্তের নির্দেশ বহাল রেখেছিল। সেই নির্দেশ শোনার পর একই মামলায় দ্বিতীয় বার সুপ্রিম কোর্টে স্পেশাল লিভ পিটিশন করে রাজ্য। সোমবার সেটিও আবার প্রত্যাহার করা হল। ফলে পুর নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তভার ইডি ও সিবিআই-এর হাতেই রইল।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে পুরসভা মামলার তদন্ত করছে ইডি এবং সিবিআই। এই দুই কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে গত মাসে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল হাই কোর্ট। বিচারপতি অমৃতা সিনহা ইডির রিপোর্ট পাওয়ার পর ভর্ৎসনার সুরে বলেছিলেন, ‘‘এই রিপোর্ট একেবারেই সন্তোষজনক নয়! তদন্তের গতি এত কম কেন?’’ রিপোর্ট জমা দিতে সময় চেয়েছিল সিবিআইও।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে পুর নিয়োগ মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার বিষয়ে রাজ্যের এই অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি সিনহা। রাজ্যকে ভর্ৎসনার সুরে তাঁর মন্তব্য ছিল, ‘‘হাই কোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে এসএলপি করলেন। আবার তা প্রত্যাহারও করে নিলেন। এটা কী ধরনের অবস্থান? বিনা পয়সায় মামলা হচ্ছে? কাদের টাকায় এই মামলা হচ্ছে?’’
