উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ ফের প্রকাশ্যে এল মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল। দলীয় শৃঙ্খলা না মানায় এবার জলঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাককে শোকজ করল তৃণমূল। এর আগে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে শোকজ করেছিল তৃণমূল। রাজ্জাকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পঞ্চায়েতে জোট করেছিলেন জলঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক। পরে বাম-কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি গঠন করে। এই কারণেই বিধায়ককে শোকজ করা হয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। শুধু তাই নয়, তিনি দলের প্রস্তাবিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া ছাড়াও একাধিক দল-বিরোধী কাজ করেছেন বলে অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী নির্বাচনের পর এ বার পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতি গঠন নিয়ে জলঙ্গি তৃণমূলে চরমে উঠেছে গোষ্ঠীকোন্দল। প্রকাশ্যে এসেছে স্থানীয় বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী শাওনি সিংহ রায়ের। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগের ব্যাখ্যা চেয়ে রাজ্জাককে নোটিস ধরিয়েছেন জেলা সভানেত্রী শাওনি। সভানেত্রীর বিরুদ্ধে ‘একনায়কতন্ত্র’, ‘স্বৈরাচারিতা’ এবং নিয়মের বাইরে গিয়ে দল চালানোর পালটা অভিযোগ এনেছেন বিধায়ক।
সূত্রের খবর, শাওনি ঘনিষ্ঠ তৃণমূল যুব সভাপতি রাকিবুলের সঙ্গে আদায় কাঁচকলা সম্পর্ক আব্দুর রাজ্জাকের। পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী বাছাই নিয়ে দু’জনের লড়াই চরম আকার নেয়। মুর্শিদাবাদ জেলা সভানেত্রী শাওনির বিরুদ্ধে কার্যত বিদ্রোহ ঘোষণা করে রাজ্জাক সহ জেলার চার বিধায়ক। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছিল হস্তক্ষেপ করতে হয় মন্ত্রী মলয় ঘটককে। উভয় পক্ষকে নিয়ে বৈঠকও করেন মন্ত্রী। তারপরেও মেটেনি সমস্যা।
বৃহস্পতিবার সকালে বিরোধীদের সঙ্গে নিয়েই পঞ্চায়েত সমিতিতে ঢোকেন জলঙ্গির তৃণমূল বিধায়ক আব্দুর রাজ্জাক। স্থায়ী সমিতি নির্বাচনের জন্য তৃণমূল সদস্যদের সঙ্গে ছিলেন যুব তৃণমূল সভাপতি রাকিবুল। শুরু হয় তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতর। বোর্ড গঠনের সময় বিধায়কের চার অনুগামী-সহ বিরোধী জোটের ১২ সদস্য, বিজেপির দুই এবং এক নির্দল সদস্যের সমর্থনে সভাপতি হিসেবে বিধায়ক-ঘনিষ্ঠ কবিরুল ইসলামের নাম প্রস্তাব করা হয়। এবং ভোটাভুটিতে তিনি জয়ীও হন। সহকারী সভাপতি হিসাবে জয়ী হন কংগ্রেসের মারিয়ম খান। এর পরেই রাজ্জাকের বিরুদ্ধে বিরোধীদের নিয়ে দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করার ‘চক্রান্তের’ অভিযোগ তোলেন জেলা তৃণমূল যুব সভাপতি। ওই ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিধায়ককে শোকজ করে দল। এ নিয়ে জেলা সভানেত্রী শাওনি বলেন, ‘‘দলের প্রস্তাবিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিরোধী সদস্যদের সঙ্গে একযোগে ভোট দান করা দলবিরোধী কাজের শামিল। জলঙ্গির বিধায়ক, ব্লক সভাপতি এবং এক প্রধানকে দলবিরোধী কাজের অভিযোগে নোটিস দেওয়া হয়েছে।’’
এ নিয়ে তৃণমূল বিধায়ক রাজ্জাক বলেন, ‘‘জেলা সভানেত্রী মুর্শিদাবাদের একাধিক হোটেলে বিরোধীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁর ইন্ধনে আমাকে অপদস্থ করার জন্য দলের যুব সভাপতি উঠে পড়ে লেগেছেন। স্বেচ্ছাচারিতা উনি করছেন। এ সবই আমি রাজ্য নেতৃত্বকে জানাব।’’
উল্লেখ্য, ৩০টি আসনের জলঙ্গি পঞ্চায়েত সমিতিতে এবার তৃণমূল জয়ী হয় ১৫টিতে। সিপিএম এবং কংগ্রেস ৬টি করে আসন পায়। এ ছাড়া বিজেপি ২টি এবং নির্দল প্রার্থী একটি আসনে জয়ী হন। সমিতির সভাপতি পদ নিয়েই শুরু হয় বিধায়কের সঙ্গে নেতৃত্বের বিবাদ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।