বালুরঘাটঃ কোটিপতিও এবারে পঞ্চায়েত ভোটের প্রার্থী! হ্যা, শুনতে অবাক লাগলেও, দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলির দুর্গ ধরে রাখতে এবারে এমনই এক কোটিপতিকে প্রার্থী করল তৃণমূল। জেলাপরিষদের ১৩ নম্বর আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়ানো ওই তৃণমূল প্রার্থীর নাম কৌশিক মাহাতো ওরফে ডাকু। হিলির জামালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিধাই এলাকার বাসিন্দা হলেও এবারের নির্বাচনে ১৩ নম্বর জেলাপরিষদ আসন থেকেই লড়ছেন তিনি। হিলি ব্লকের ধলপাড়া ও বিনশিরা এই দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে তৈরি হওয়া নতুন জেলা পরিষদের আসনটিতে প্রার্থী হওয়া কৌশিক মাহাতো নির্বাচন কমিশনকে যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে তার ও তার স্ত্রীর নামে থাকা সম্পত্তি ও নগদ অর্থের পরিমান প্রায় এক কোটি টাকা। যা জেলার প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদেরই পিছনে ফেলে দিয়েছে। আচমকা তৃণমূল এমন কোটিপতিকে ভোটে দাঁড় করিয়ে দেওয়াতেই, এখন জোর চর্চা গোটা দক্ষিণ দিনাজপুরে।
এবারে হিলির ১৩ নম্বর জেলা পরিষদ আসনটি হেভিওয়েট আসন বলে পরিচিত। বিজেপি এই আসনে প্রার্থী করেছে তাদের জেলার সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকারকে। গত বছর বাপি সরকার বালুরঘাটের একটি আসনে, দাঁড়িয়ে হেরে গেলেও, এবারে হিলির ওই আসনে তাকে দাঁড় করিয়েছে বিজেপি। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদ যদি বিজেপির দখলে আসে, তবে বাপি সরকারকেই সভাধিপতি করা হতে পারে। তাই সেক্ষেত্রে বাপি সরকারকে এই আসনে জয় পেতেই হবে।
আবার বামেদের ঘুরে দাঁড়াতে এই আসনে জয় পেতেই হবে। সিপিএম জেলার একমাত্র এই আসনে তাদের জেলা কমিটির সদস্য তথা আইনজীবীদের রাজ্য নেতা শিবতোষ চ্যাটার্জীকে প্রার্থী করেছে। বাম শরিকদের মধ্যে হিলিতে আরএসপির সংগঠন শক্তিশালী। তবুও মনোনয়ন পর্বে আরএসপির প্রার্থীর বিরুদ্ধে শিবতোষ চ্যাটার্জিকে সিপিএম প্রার্থী করায়, আরএসপি ওই আসন থেকে তাদের প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করে নেয়। তাই শিবতোষ চ্যাটার্জির জয়ের উপরেই নির্ভর করবে বাম ঐক্যের অনেকটাই। সিপিএমের এই হেভিওয়েট প্রার্থীকে জেতাতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে আরএসপিও।
বাম ও বিজেপি যখন তাদের হেভিওয়েট প্রার্থীদের এই আসনে নামিয়েছে, তখন তৃণমূল নামিয়েছে কোটিপতি প্রার্থীকে। একদা আরএসপি কর্মী কৌশিক মাহাতোই এখন তৃণমূলের তুরুপের তাস।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কোটিপতি ওই তৃণমূল প্রার্থীর কাছে নগদ অর্থ রয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। স্ত্রীর ব্যাঙ্ক একাউন্টে দুলক্ষ টাকা এবং নগদ ২৫ হাজার টাকা রয়েছে। প্রার্থীর নিজস্ব দুই ভরি সোনার গহনা এবং স্ত্রীর রয়েছে সাতভরি সোনার গহনা। বাড়ি ও জমি হিসাবে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার সম্পত্তি রয়েছে কৌশিক বাবুর। এছাড়াও অন্যান্য বিনিয়োগ হিসাবে আট লক্ষ টাকা দেখিয়েছেন ওই তৃণমূল প্রার্থী। রয়েছে একটি মোটর সাইকেল ও একটি চার চাকা গাড়িও। নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া তথ্যে ওই তৃণমূল প্রার্থী জানিয়েছেন তার বার্ষিক আয় ৫ লক্ষ টাকা। যেখানে তিনি নিজেকে একজন এক্সপোর্টার ও মদের ব্যবসায়ী হিসাবে দাবি করেছেন। এছাড়া তার একটি গেস্ট হাউসও রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে। আর নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া এই হিসাবই জেলার সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদেরকে ছাপিয়ে গিয়েছে। খোদ তৃণমূলের জেলা সভাপতি, যুব সভাপতিরা নির্বাচনে লড়াই করলেও, কৌশিক মাহাতোর সম্পত্তির ধারেপাশে পৌঁছাতে পারেনি কোন প্রার্থীই।
যদিও তৃণমূলের কোটিপতি প্রার্থীকে তেমন পাত্তা দিতে চায়নি বিরোধীরা। সিপিএম প্রার্থী শিবতোষ চ্যাটার্জী বলেন, কোটিপতি প্রার্থী টাকা ছিটিয়ে পিকনিক, মিষ্টির প্যাকেট বিলি করলেও ভোটারদের কিনতে পারবেন না। বিজেপি প্রার্থী বাপি সরকার বলেন, রাজনীতির লড়াইয়ে কোটিপতি, লাখপতি বলে কোন ব্যাপার নেই। সেখানে লড়াই শুধুমাত্র রাজনৈতিক। তবে বিরোধিরা যাই বলুক, নিজের জয়ের ব্যাপারে একশো শতাংশ আশা বাদী তৃণমূল প্রার্থী কৌশিক মাহাতো।