শামুকতলা: টাকা না দিলে খুনের হুমকি (Threats to kill) দেওয়ার ঘটনা খুব সাধারণ। কিন্তু স্কুলের পরিকাঠামো বা মিড–ডে মিলের (Mid-day meal) খাবারের মান খারাপ বলে জানিয়ে প্রধান শিক্ষককে খুনের হুমকি? শামুকতলা থানার ভাটিবাড়ি হাইস্কুলে এমনই ঘটনা ঘটেছে। রাতে স্কুলঘরের জানলা ভেঙে ভিতরে ঢুকে কেউ বা কারা ভিতরে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে অফিসঘরের বাইরে খুনের হুমকি দেওয়া পোস্টার সেঁটে দেয়। স্কুলের কোনও উন্নয়ন হয়নি বলে জানিয়ে বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা ওই পোস্টারে প্রধান শিক্ষককে দায়ী করা হয়েছে। নির্দিষ্ট তারিখে প্রধান শিক্ষককে খুন করা হবে বলেও পোস্টারটিতে লেখা ছিল।
স্কুলটি ভাটিবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির গা ঘেঁষে রয়েছে। তা সত্ত্বেও স্কুলে এমন ঘটনা ঘটায় শিক্ষক–শিক্ষিকারা রীতিমতো আতঙ্কে। প্রধান শিক্ষক (Head Master) ইতিমধ্যেই পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। শিক্ষকরা শীঘ্রই আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ও জেলা শাসকের দ্বারস্থ হবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ দত্ত চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের স্কুলে ভালোমতোই পড়াশোনা চলছে। স্কুলের পরিকাঠামো উন্নত করতে সমস্ত রকম চেষ্টাই চলছে। যা হয়েছে তাতে খুবই কষ্ট পেয়েছি। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি। পুলিশ সুপার ও জেলা শাসককে আলাদাভাবে সবকিছু জানাব।’ অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়ে আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, ‘ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।’
সোমবার সকালে চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মী স্কুল খোলার সময় ওই হুমকি পোস্টারটি তাঁর নজরে আসে। অফিসঘরে এমনিতে দুটি তালা লাগানো থাকে। এদিন সেখানে আরেকটি তালা লাগানো ছিল। তা খতিয়ে দেখতে গিয়েই ওই কর্মী পোস্টারটি দেখতে পান। পরে স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজে মুখঢাকা অবস্থায় দুজনকে গোটা ঘটনাটি ঘটাতে দেখা যায়। সাদা কাগজের ওই পোস্টারে স্কুলের উন্নয়ন খাতে আসা টাকা ও কম্পিউটার ক্লাসের পড়ুয়াদের কাছ থেকে নেওয়া টাকার সঠিক হিসেবের দাবি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি ক্লাসঘর বেহাল অবস্থায় রয়েছে বলে জানানোর পাশাপাশি স্কুলে মিড–ডে মিলের খাবারের মান খারাপ রয়েছে বলে জানিয়ে প্রধান শিক্ষককে দায়ী করা হয়েছে। পোস্টারে প্রধান শিক্ষকের ডাকনাম ব্যবহার করা হয়েছে। সমস্ত সমস্যা না মেটানো হলে ১৩ জানুয়ারি প্রধান শিক্ষককে ভাটিবাড়ির মূল রাস্তায় খুনের হুমকি (Threats to kill) দেওয়া হয়েছে। পোস্টারের ওপরদিকে ‘নাইট ভ্যাম্পায়ার টিম’ ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে লেখা থাকলেও স্কুলের পড়ুয়ারাই এই পোস্টারটি দিয়েছে বলে শেষের দিকে উল্লেখ রয়েছে।
খবর পাওয়ার পর পুলিশ এদিন স্কুলে গিয়ে অফিসঘরে লাগানো অতিরিক্ত তালাটি ভেঙে দেয়। পরে দেখা যায়, দুষ্কৃতীরা স্কুলে ঢুকে একটি সিসিটিভি ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে দিলেও স্কুলের বারান্দায় থাকা দুটি সিসিটিভি ক্যামেরার কথা ভুলে গিয়েছিল। ওই ক্যামেরাতেই গোটা ঘটনাটি ধরা পড়ে। যে দুজনকে গোটা ঘটনাটি ঘটাতে দেখা গিয়েছে তাদের মুখ কাপড়ে ঢাকা ছিল। পরে প্রধান শিক্ষক সহ অন্য শিক্ষকরা ভাটিবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির ওসি জাকির হোসেনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।