ফাঁসিদেওয়া: আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া দু’টি হাতি রাতে ফিরল ভারতে (India)। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে হারিয়ে গেল অন্ধকারে। সীমান্ত পেরিয়ে হাতির অন্য দেশে চলে যাওয়ার ঘটনায় মহা সমস্যায় পড়া রাজ্য বনদপ্তরের হাতি ফেরানোর মরিয়া চেষ্টা সফল হল। মঙ্গলবার সকাল নাগাদ খবর পাওয়া যায়, সম্ভবত বৈকন্ঠপুর জঙ্গল থেকে দু’টি হাতি ফুলবাড়ি হয়ে লালদাসজোত এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ (Indo-Bangladesh Border) সীমান্তের কাঁটাতার ছিঁড়ে বাংলাদেশ (Bangladesh) ঢুকে পড়ে।
এরপর ওই দেশের ইসলামবাগ সীমান্ত দিয়ে হাতি দু’টি পঞ্চগড় (Panchagarh) জেলার তেতুলিয়ার দক্ষিণ কাশেমগঞ্জ এলাকায় গিয়ে ভুট্টা খেতে আটকে পড়ে। খবর পেয়ে বনদপ্তরের কর্মীরা শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়া (Phansidewa) ব্লকের মানগছ এলাকায় ফকিরপাড়া বিওপির ১৭৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের বিএসএফ আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেন। সেই সময় পর্যন্ত সীমান্তে নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে হাতি আটকে পড়ার কোনও খবর ছিল না। খোঁজখবর নিতেই জানা যায়, দু’টি হাতি মহানন্দা নদীর অপরপ্রান্তে বাংলাদেশে আটকে রয়েছে।
এরপর, বৈকুন্ঠপুর বনবিভাগ, কার্সিয়াং বনবিভাগের ঘোষপুকুর রেঞ্জ, বাগডোগরা রেঞ্জের এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের কর্মীরা সীমান্ত এলাকায় পৌঁছান। তবে, এক দেশ থেকে হাতি অন্য দেশে চলে যাওয়ায় তাদের ফেরাতে সমস্যায় পড়ে রাজ্য বনদপ্তর। এদিন বিকেলে বন্দরগছে মহানন্দা নদীর পাড়ে বিএসএফ এবং বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড সহ ওই দেশের স্থানীয় প্রশাসনের আধিকারিকদের উপস্থিতিতে ফ্ল্যাগ মিটিং করা হয়। মিটিং থেকে জানা যায়, পঞ্চগড় এলাকায় এলিফ্যান্ট স্কোয়াড নেই। চট্টগ্রাম থেকে এলিফ্যান্ট স্কোয়াড আনতে একদিন পেরিয়ে যাবে।
সেই কারণে এদেশের বনকর্মীদের হাতিগুলি ফিরিয়ে আনতে অনুরোধ জানানো হয়। এরপরই একে একে বনদপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ফাঁসিদেওয়ার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে আসেন। এরই মাঝে বিকেলে বাংলাদেশের কাশেমগঞ্জের নূরজামান (২৩) নামে এক যুবকের হাতির হানার (Elephant Attack) মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। এরপর সন্ধ্যা নাগাদ ঢাকা থেকে নির্দেশ আসতেই রাজ্য বনদপ্তর (Forest Department) সীমান্তে কাঁটাতারের ওপারে প্রবেশ করে ওই দেশে আটকে পড়া হাতি দু’টিকে গাইড করে এদেশের জঙ্গলে ফেরানোর কাজ শুরু করে।
এই অভিযানে উপস্থিত ছিলেন ওয়াইল্ড লাইফ সিসিএফ (নর্থ) ভাস্কর জেবি, সিসিএফ (নর্দান সার্কেল) এসকে মোলে, বৈকুন্ঠপুরের ডিএফও হরেকৃষ্ণেণ, এডিএফও (কার্সিয়াং) ভূপেন বিশ্বকর্মা সহ অন্য আধিকারিকরা৷ বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও স্থানীয়দের হাতির থেকে দূরে থাকার জন্য বনদপ্তরের তরফে মাইকিং করা হয়। বনদপ্তর হাতি তাড়ানোর কাজ শুরু করতেই ফাঁসিদেওয়ার গোয়ালগছ, ফকিরগছ, মানগছ এলাকায় হাতি দু’টি দাপিয়ে বেরিয়েছে। গোটা এলাকা বিএসএফ জওয়ান এবং বনকর্মীরা নিরাপত্তার জন্য ঘিরে রেখেছিলেন।
অবশেষে এদিন রাতে ফাঁসিদেওয়া সীমান্তের ২১ নম্বর গেট দিয়ে এদেশে প্রবেশের পর হাতি দুটি নিকরগছ, চুনিয়াটুলি, মনভোগজোত, জ্যোতিনগর হয়ে হেরাগছ হয়ে ঘোষপুকুর যায় বলে খবর। তবে, এরপরই অন্ধকারে হারিয়ে যায় হাতি দু’টি। ঘটনার জেরে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। হাতি দেখতে এলাকার রাজ্য সড়ক থেকে শুরু করে পাড়ার রাস্তায় ভিড় করেন সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বনদপ্তর এবং স্থানীয় পুলিশকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে।
যেদিকে ছুটছে হাতি, গ্রামবাসীরাও সেদিকে গিয়েই ভিড় করছেন। ফলে, হাতি দু’টিকে গাইড করে জঙ্গলের দিকে পাঠাতে সমস্যা হচ্ছে বলে বনদপ্তর দাবি করেছে। এদিকে, হাতির আতঙ্কে রয়েছেন ফাঁসিদেওয়া, বন্দরগছ সহ একাধিক গ্রামের সাধারণ মানুষ। এই খবর লেখার সময় পর্যন্ত হাতিগুলিকে জঙ্গলে ফেরানো সম্ভব হয়নি। এপ্রসঙ্গে এখন পর্যন্ত বনদপ্তরের কোনও আধিকারিকের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, হাতির হানায় এদেশে হতাহতের কোনও খবর মেলেনি। শেষ পর্যন্ত হাতিগুলিকে কীভাবে জঙ্গলে ফেরানো যায় তা নিয়ে বনদপ্তরের আধিকারিকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।