নাগরাকাটা: পুজোর সময় দু’জনই নিয়ম করে বাড়ি ফিরতেন। কর্মস্থলে ফিরতেন একেবারে দীপাবলির শেষে। হৈ হুল্লোড় আর বাড়ির লোকেদের সঙ্গেই কেটে যেত আস্ত একটা মাস। সুখানি বস্তির মহাদেব মিঞ্জের ওই রুটিন থেমে গিয়েছে ১১ বছর আগে। অন্যদিকে, মংরুপাড়ার শংকর ছেত্রীও না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার সময়ও বছর ফুরিয়েছে। নাগরাকাটার ওই দুই শহিদ পরিবারে তাই দীপাবলির রোশনাই ফিঁকে। নিজেদের স্বামীর স্ট্যাচু কিংবা ফোটোর সামনে মোমবাতি জ্বেলে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করেই আলোর উৎসব উদযাপন করেছেন মহাদেবের স্ত্রী সিমলা ও শংকরের সহধর্মিনী পুনম।
বাবার স্বপ্ন ছেলেমেয়েরাই পূরণ করবে এমন আকাঙ্খাকে বুকে চেপে রেখেই এখন জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ে ওই দুই শহিদ ঘরণী। সিমলার স্বামী মহাদেব প্রয়াত হন ২০১২-র ১৯ সেপ্টেম্বর। আর পুনমের জীবনে বিপর্যয় নেমে আসে গত বছরের ২৯ জুলাইয়ের এক বর্ষণমুখর মধ্যরাতে। মহাদেব মাওবাদী আক্রমণের বলি। ওই সিআরপিএফ জওয়ানের পোস্টিং ছিল ছত্তিশগড়ের সুকমা জেলায়। অন্যদিকে, মণিপুরের নানে জেলায় বিধ্বংসী ধসে শহিদ হন টেরিটোরিয়াল আর্মির ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নের জওয়ান শংকর।
মহাদেবের স্ত্রী সিমলা বলেন, ‘১১ বছর ধরে মহাদেব আর বাড়ি আসেন না। সেটা যে কখনোই হবে না নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। গর্ব একটাই তিনি দেশের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। এখন দুই ছেলে প্রতিষ্ঠিত হলেই স্বামীর স্বপ্ন পূরণ হবে। মংরুপাড়ার বাসিন্দা শংকরের পরিবারটি তেমন স্বচ্ছল নয়। শংকরের ৫ বছরের একটি ফুটফুটে কন্যা রয়েছে। ওই খুদেও ঘটনা পরম্পরায় বুঝে গিয়েছে তাঁর বাবা আর কখনও আসবে না। হয়তো সেকারণেই দীপাবলির দিন মা পুনমের সঙ্গে সেও শংকরের ফোটোর সামনে মোমবাতি জ্বালিয়েছে। এক দৃষ্টে তাকিয়ে থেকেছে সেনার পোশাক পরিহিত বাবার প্রতিকৃতির দিকে। পুনমের কথায়, ‘মেয়ের জন্যেই এখন আমার বেঁচে থাকা। শংকর যে ওকে বড্ড ভালবাসতো।’