প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। তাই একটু সংসারে সুদিন ফেরানোর বাসনা নিয়ে গুজরাটে কাজে গিয়েছিল বাংলার দুই শ্রমিক। কিন্তু সেখানে রোজগারের পরিবর্তে তাদের ভয়ংকর পরিণতির শিকার হতে হল। রুপো চুরির অভিযোগ এনে বাংলার ওই দুই পরিযায়ী শ্রমিককে গুজরাটে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাদের পরিবারের আনা এমন অভিযোগ ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে পূর্ব বর্ধমানের কালনার নতুনচর গ্রামে। রাহুল শেখ(১৮) ও সুমন শেখ(১৬) নামে দুই শ্রমিকের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ নতুনচর গ্রাম।
কালনা ১ নম্বর ব্লকের কৃষ্ণদেবপুর পঞ্চায়েত এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম নতুনচর। এই গ্রামের বাসিন্দা রাহুল শেখ।তাদেরই প্রতিবেশী সুমন শেখ। দু’জনেরই পরিবারে অভাব নিত্যদিনের সঙ্গী। তাদের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ’একটু ভালো রোজগার করে সংসারে সুদিন ফেরানোর অভিপ্রায়ে দুই মাস আগে যুবক ও কিশোর গুজরাটে কাজে যায়। শিক্ষানবিশ হিসাবে সেখানকার রাজকোটের একটি সোনা-রুপোর দোকানে তারা রুপোর চাঁদি তৈরির কাজ যোগ দেয়। সেই দোকান থেকেই রূপো চুরি যায়। দোকান মালিক সন্দেহ করে বসেন রাহুল ও সুমন ওই রুপো চুরি করেছে।
এরপরেই গত বৃহস্পতিবার দোকান মালিকের কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ মিলে রাহুল ও সুমনকে নির্মমভাবে মারধর শুরুকরে। তা দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেয়। ততক্ষণে রাহুল ও সুমন দু’জনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। পুলিশ তাদের মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। শুক্রবার সেই খবর নতুনচর গ্রামে যুবকদের বাড়িতে পৌছায়। পাড়া প্রতিবেশীর সাহায্য করা অর্থে গাড়ি ভাড়া যোগাড় করে রবিবার দুই পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবার রবিবার গুজরাট রওনা দিয়েছে।
মৃত রাহুলের কাকা আমির চাঁদ শেখ বলেন, “আমরা দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারের লোক। দিনমজুরের কাজ করেই আমাদের সংসার চালাতে হয়। একটু ভালো রোজগার করে সংসারে সবার মুখে হাঁসি ফোটাতে ভাইপো এবং প্রতিবেশী পরিবারের আর একজন গুজরাটের রাজকোটে কাজে যায়। কিন্তু রুপো চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গত বৃহস্পতিবার সেখানে আমার ভাইপো রাহুল এবং সুমনকে পিটিয়ে মেরে দেওয়া হয়েছে। পরদিন শুক্রবার রাজকোট পুলিশ মাধ্যমে আমরা সেই খবর পাই। ছেলেদের মৃতদেহ বআনতে রবিবার আমাদের গুজরাতের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।“ এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য তথা তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী আরতি হালদার বলেন, “আমরা পরিবারের পাশে রয়েছি।“