বালুরঘাটঃ রাজ্য সরকারের পোস্টারে ব্র্যান্ড বালুরঘাটের দুই আদিবাসী ছাত্রী। কন্যাশ্রী দিবসের আগে প্রচারমূলক ব্যানারে জায়গা পাওয়ায় খুশি বালুরঘাট তথা জেলাবাসী। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নারী ও শিশু বিকাশ এবং সমাজ কল্যাণ দপ্তরের তরফে প্রকাশিত এই পোস্টারে দেখা মিলেছে বালুরঘাটের নালন্দা বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণীর দুই ছাত্রীর।
প্রতিবছর ১৪ আগস্ট রাজ্যজুড়ে কন্যাশ্রী দিবস পালিত হয়। তার আগে রাজ্যের শতাধিক স্কুলের মধ্যে থেকে একটি ছবিকে সরকারি পোস্টারে স্থান দেওয়া হয়। এবছর কন্যাশ্রী দিবসের প্রাক্কালে সেখানে বালুরঘাটের দুই আদিবাসী ছাত্রী জায়গা করে নিয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই খুশির হাওয়া বইছে বালুরঘাট তথা জেলাজুড়ে। খুশির কথা জানিয়েছেন নালন্দা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক সহ ছাত্রছাত্রীরা। এবছর রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের দশম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। সরকারি এই পোস্টারে দেখা যাচ্ছে রাজ্যজুড়ে স্কুল ও কলেজে কন্যাশ্রী দিবস পালিত হবে। সেই উপলক্ষে সাইকেল র্যালির প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। সেখানেই সাইকেল হাতে এই দুই ছাত্রীর ছবি ফুটে উঠেছে। এদের একজন ললিতা পাহান ও আরেকজন প্রিয়াঙ্কা মার্ডি। তারা একই স্কুলে দশম শ্রেণীর ছাত্রী। স্কুলের মাঠেই কয়েক মাস আগে তাদের ছবি তোলা হয়েছিল।
জানা গিয়েছে, ললিতার পাহানের বাড়ি বালুরঘাটের পুলিশ লাইন এলাকায়। তার বাবা গোবিন্দ পাহান সামান্য রংমিস্ত্রির কাজ করেন। পঞ্চম শ্রেণী থেকেই ললিতা নালন্দা বিদ্যাপীঠ স্কুলে পড়াশোনা করছে। ভবিষ্যতে তার আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছে। প্রিয়াঙ্কা মার্ডি ছবিতে সাইকেলের পেছনে বসে আছে। তার বাড়ি কুমারগঞ্জের ফকিরগঞ্জ এলাকায়। তার বাবা-মা কেউ নেই। যার জেরে স্কুলের পাশেই নিবেদিতা হোমে থেকে কষ্টে পড়াশোনা করছে। বড় হয়ে তার ইচ্ছে নার্স হয়ে অসুস্থ মানুষদের সেবা করবে। ললিতা ও প্রিয়াঙ্কা দুজনেই গলায় গলায় বন্ধু। ফলে দুই বন্ধুর ছবি একইসঙ্গে রাজ্যের পোস্টারে স্থান পাওয়ায় খুশির অন্ত নেই তাদের।
স্কুলে এই সময় পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে হাসিমুখে ললিতা জানায়, ‘পোস্টারে আমার ছবি দেখার পরে সহপাঠীরা আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। আশেপাশের সকলেই এই ছবি প্রকাশ পাওয়ায় আনন্দিত। আমরা ভাবতেও পারিনি যে আমাদের ছবি রাজ্যের পোস্টারে স্থান পাবে।’প্রিয়াঙ্কার কথায়, ‘স্কুল থেকে বলা হয়েছিল কন্যাশ্রী প্রকল্পের জন্য ছবি তোলা হবে। তখন কিছুই বুঝতে পারিনি। ছবি তোলা হয়েছিল। কিন্তু সেই ছবি যে মুখ্যমন্ত্রীর ছবির পাশে এভাবে জায়গা করে নেবে, তা ধারণা করতে পারিনি।’
নালন্দা বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক সৌমিত দাস বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের কন্যাশ্রী দপ্তর থেকে স্কুলের গবেষণাগার সহ ছাত্রীদের একাধিক ছবি নেওয়া হয়েছিল। কন্যাশ্রী ক্যালেন্ডার সহ প্রকল্পের অধীনে একাধিক কাজে এই ছবি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সেটা কন্যাশ্রী দিবসের আগে এভাবে রাজ্যের ব্যানারে স্থান পাবে ভাবিনি। ২০১৩ সালে যখন কন্যাশ্রী শুরু হয়। তখনও এই স্কুলের এক মেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে উপহার নিয়েছিল। এবার দশম বর্ষে দুই ছাত্রীর ছবি স্থান পেল। এর চেয়ে খুশির খবর কিছু নেই।’
জেলার ভূমিপুত্র তথা রাজ্যের মন্ত্রী বিপ্লব মিত্র ওই দুই ছাত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ‘কন্যাশ্রী মুখ্যমন্ত্রীর একটি স্বপ্নের প্রকল্প। তিনি খুব কাছ থেকে এই প্রকল্প দেখেন। সেখানে আদিবাসী দুই মেয়েকে পোস্টারে স্থান দিয়েছেন। তিনি তথাকথিত পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করছেন। সেখানে আমার জেলার দুই আদিবাসী মেয়ে জায়গা করে নেওয়ায় আমরা আপ্লুত।’