দীপঙ্কর মিত্র, রায়গঞ্জ: শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ৩০ বছর ধরে সংগীত চর্চা চালিয়ে গেলেও সরকারিভাবে আজও জোটেনি ‘শিল্পী’ স্বীকৃতি। এই আক্ষেপই ঝরে পড়ল রায়গঞ্জ পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের দেবীনগর এলাকার বাসিন্দা বাবুল দত্ত (৬২) এবং হাবুল দত্ত (৬০) নামে দুই ভাইয়ের গলায়। তাঁরা দুজনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তা নিয়েই তিন দশক ধরে সংগীত চর্চা করছেন। এলাকার ছেলেমেয়েদের তবলা ও সংগীত চর্চায় আগ্রহী করে তুলতে তাঁরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
হাবুলবাবু তবলাবাদক। আর্থিক কারণে বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেননি। কোনওমতে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়েছেন। পুঁথিগত শিক্ষা না থাকলেও গুরুর কাছে মুখে মুখে তবলার বোল শিখে দক্ষ তবলাবাদক হিসেবে সুনাম অর্জন করেছেন তিনি। তবলা শিখিয়ে মাসে তাঁর উপার্জন হয় ২ হাজার টাকা। আর মানবিক ভাতা হিসেবে ১ হাজার টাকা পান। অন্যদিকে, বাবুলবাবু ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়ে মাধ্যমিক পাশ করেছেন। তিনি ক্লাসিক্যাল, ভক্তিগীতি চর্চা করেন। বাবুলবাবু মানবিক ভাতা হিসেবে মাসে হাজার টাকা পান। গান শিখিয়ে আয় হয় দুই হাজার টাকা।
চোখে দেখতে না পারায় ছাত্রছাত্রীদের গানের স্বরলিপি এবং তবলার বোল লিখে দিতে পারেন না দুজনে। মুখে মুখেই তা বলে দেন। ছাত্রছাত্রীরা তা লিখে নেয়। তাঁদের আক্ষেপ, আগে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে ডাক পেতেন। কিন্তু এখন আর ডাক পান না। বিশেষভাবে সক্ষম হিসেবে মানবিক ভাতা পেলেও সরকারি স্বীকৃতি আজও পাননি দুজনে।
বাবুলবাবু বলেন, ‘সরকার থেকে পাই মানবিক ভাতা। তবে শিল্পীর মর্যাদা পাইনি।’ একই কথা হাবুলবাবুরও। তিনি বলেন, ‘মুখে মুখে তবলার বোল শিখেছি। দৃষ্টিশক্তির সমস্যার কারণে লিখতে পারতাম না। গানও শিখেছি শুনেই শুনেই।’ তাঁরা চান সরকারি স্বীকৃতি।
এবিষয়ে উত্তর দিনাজপুর জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক অভিজিৎ বিশ্বাস বলেছেন, ‘লোকশিল্পী হিসেবে ওঁদের নাম নথিভুক্ত নেই। তবুও আগামীতে ওই দুই শিল্পী যাতে সরকারি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারেন, তা দেখা হবে।‘