পুণ্ডিবাড়িঃ এক যুবককে খুনের অভিযোগ উঠল তার প্রেমিকার বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পুণ্ডিবাড়ি থানার অন্তর্গত পাতলাখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের খাগড়িবাড়ি এলাকায়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পুণ্ডিবাড়িতে। মৃত যুবকের নাম রাজীব সরকার (২৪)।
ঘটনা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুণ্ডিবাড়ি সংলগ্ন সাজেরপাড় ঘোড়ামারা এলাকার রাজীবের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী শীতলিপাঠ এলাকার রিম্পা রায়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সোমবার বেলা বারোটা নাগাদ রিম্পার ফোনে রাজীব বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর রাত আটটা নাগাদ মেয়েটি রাজীবের মামাতো ভাইকে ফোন করে জানায় যে রাজীবের অবস্থা ভালো নেই। সে খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ওই খবরে রাজীবের পরিবারের লোকজন বিস্মিত হয়ে তড়িঘড়ি করে খাগড়িবাড়ি এলাকায় পৌঁছে দেখতে পান রাজীব মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। তার গলায় একটি রবারের দড়ি পেঁচানো রয়েছে। পাশেই তার প্রেমিকাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন তারা। এরপর তারা দ্রুততার সঙ্গে রাজীবকে পুণ্ডিবাড়িতে অবস্থিত ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এরপর ওই রাতেই রাজীবের পরিবারের লোকজন পুণ্ডিবাড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ রিম্পাকে আটক করেছে। মঙ্গলবার ঘটনার তদন্তে ঘটনাস্থলে যান ডিএসপি হেডকোয়ার্টার চন্দন দাস, পুণ্ডিবাড়ি থানার ওসি নকুল রায় সহ পুলিশের একটি টিম। তারা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছেন বলে জানা গিয়েছে।
যদিও রাজীবের পরিবারের অভিযোগ তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। রাজীবের এক নিকটাত্মীয় তাপস পাল জানান, তার ভাইয়ের সঙ্গে অভিযুক্ত যুবতীর বছরখানেক আগে থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। রাজীব তার প্রেমিকার বাড়িতে কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দিলেও তারা তাতে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে যুবতীর পরিবারের তরফে অন্যত্র তার বিয়ে ঠিক করেন। এমতাবস্থায় সোমবার দুপুরে ওই যুবতীর ফোন পেয়ে রাজীব বাড়ি থেকে বের হয়। রাতে তাদের কাছে খবর পৌঁছায় রাজীব আশঙ্কাজনক অবস্থায় খাগরিবাড়ি এলাকায় পড়ে আছে। এরপরেই তারা সেখানে পৌঁছে রাজীবের পাশে যুবতীকে দেখতে পান। রাজীবকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
একই কথা জানিয়েছেন রাজীবের অপর এক নিকটাত্মীয় অভিজিৎ সরকার। তাদের কথায় তারা যখন ঐদিন রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছান তখন অভিযুক্ত যুবতী তাদের জানায় রাজীব আত্মহত্যা করেছে। এরপরেই তাদের বিষয়টি সন্দেহ হলে তারা পুলিশকে খবর দেন। তারা বলেন যে জায়গায় ঘটনাটি ঘটেছে সেটি একেবারেই ফাঁকা জায়গা। আশপাশে কোনো বাড়িঘর নেই। তাছাড়া সেখানে কোনো গাছও ছিল না। তাহলে রাজীব তার প্রেমিকার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে একা একা কি করে আত্মহত্যা করে? এই প্রশ্নই তাদের মাথায় ঘুরছে। ঘটনাটি একেবারেই পরিকল্পনা মাফিক খুন বলে তারা দাবি করেছেন।
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয় গোটা এলাকা জুড়ে। রাজীবের পরিবারের আরও অভিযোগ তার মাথায়, পায়ে ও পিঠে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে খুন করা হয়েছে। আর ওই যুবতী এতবড় একটি ঘটনা একা করেনি। তার সঙ্গে আরও কেউ ছিল। অবিলম্বে তারা অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। মঙ্গলবার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে যুবতীকে গ্ৰেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চলছে।