হরিশ্চন্দ্রপুরঃ পঞ্চায়েতের পর এবার রাজ্যের মন্ত্রী তথা হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তজমুল হোসেনের খাস তালুকে হরিশ্চন্দ্রপুর সদর এলাকার হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নং পঞ্চায়েত সমিতিও হাতছাড়া হয়ে গেল তৃণমূলের। হাইকোর্টের নির্দেশে আজ রাজ্য পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর অভূতপূর্ব নিরাপত্তায় হরিশ্চন্দ্রপুর এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতি বোর্ড গঠন করল কংগ্রেস এবং সিপিএমের জোট।
শাসক দলের হারের কোপ পরল বিডিওর উপর। বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া চলার সময় বিডিও কে দালাল বলে কটাক্ষ করলেন তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা। এই হারের জন্য ব্লক নেতৃত্ব কেও দায়ী করল তৃণমূলের জয়ী পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যরা। যদিও জোটের বক্তব্য, হরিশ্চন্দ্রপুরের মানুষ দুর্নীতিবাজদের সরিয়ে ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা করেছে হরিশ্চন্দ্রপুর এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতিতে।
প্রসঙ্গত মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া ছিল। ২১ আসন বিশিষ্ট হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক পঞ্চায়েত সমিতিতে ১১ টি তে আসনে জিতেছিল কংগ্রেস-সিপিএম জোট। আর ১০ টি আসন গিয়েছিল তৃণমূলের ঝুলিতে। পঞ্চায়েত সমিতি দখলের জন্য মরিয়া প্রচেষ্টা করেছিল শাসকদল। জোটের জয়ী প্রার্থীদের গোপন শিবির কে লক্ষ্য করে উঠেছিল গুলি চালানোর অভিযোগ। চলতি মাসের ১৪ তারিখ নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত করেছিল প্রশাসন। শনিবার সকাল থেকেই ব্লক চত্বর জুড়ে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশবাহিনী। উভয় পক্ষেরই প্রচুর কর্মী-সমর্থক জমায়েত ছিল। নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী শুরু হয় বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া। এগারো – দশ ব্যবধানে ভোটে জিতে সভাপতি হন তহমিনা খাতুন এবং সহ সভাপতি আব্দুল তাহের নির্বাচিত হয় জোটের পক্ষ থেকে।
যদিও পঞ্চায়েত সমিতি হাত ছাড়া হওয়া যেন হজম হচ্ছে না শাসকদলের। বোর্ড হাতছাড়া হতেই তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির জয়ী সদস্য স্বপন আলী দোষারোপ করলেন প্রশাসনকে। জোটের দালাল বললে কটাক্ষ করলেন বিডিও কে। স্বপন আলীর অভিযোগ, এই হারের জন্য দায়ী তৃণমূলের ব্লক নেতৃত্বও। স্বপন বাবু জানান বিডিও জোটের দালালি করেছে। ভোট গ্রহণের সময় উনি জোটের পক্ষেই পক্ষপাত মূলক আচরণ করেছেন। তৃণমূলের প্রার্থীদের ফ্যানের নিচে পর্যন্ত বসতে দেওয়া হয়নি। যদিও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিডিও অনির্বাণ বসু।
এদিন সকাল থেকে হরিশ্চন্দ্রপুর এক নং পঞ্চায়েত সমিতি এলাকার ৫০০ মিটার পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে পুলিশ প্রশাসন। পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনকে ঘিরে সকাল থেকেই কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী এবং পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা ছিল তুঙ্গে। সূত্রের খবর বোর্ড গঠনের সময় শাসক এবং বিরোধী মেম্বারদের ভোটাভুটি চলাকালীন চিৎকার চেঁচামেচিতে সাময়িকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন হরিশ্চন্দ্রপুর এক নম্বর ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু। এমনকি স্থানীয় হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে ও চিকিৎসা পরিষেবা প্রস্তুত রাখতে বলা হয় ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে। যদিও শেষ পর্যন্ত হাসপাতাল নিয়ে যেতে হয়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে পঞ্চায়েত সমিতি গঠন হওয়ার পরই ব্লক অফিস চত্বরে দাঁড়িয়ে এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক তথা জোটের নেতা মোস্তাক আলম বলেন, ‘মানুষ জোটের প্রার্থীদের পক্ষে রায় দিয়েছে। বিগত কয়েকদিন ধরে ওদের প্রার্থীদেরকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখানো আর্থিক প্রলোভন, হুমকি লাগাতার চলেছে শাসক দলের পক্ষ থেকে। তবুও আমাদের প্রার্থীরা নিজেদেরকে বিকিয়ে দেয় নি। শেষ পর্যন্ত আমরাই বোর্ড গঠন করতে পারলাম’।
প্রসঙ্গত শাসক দল পরিচালিত হরিশ্চন্দ্রপুর এক নং পঞ্চায়েত সমিতি বিগত পাঁচ বছরে ২০১৭ সালের বন্যা ত্রাণ কেলেঙ্কারি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হয়েছিল। এই দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সহ একাধিক কর্মাধ্যক্ষ এবং সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা পর্যন্ত হয়। জেল পর্যন্ত খাটতে হয় এক কর্মাধ্যক্ষকে। লোকসভা নির্বাচনের আগে হরিশ্চন্দ্রপুর সদরে শাসক দলের ভরাডুবি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রসঙ্গে দলের খারাপ ফলাফল হয়েছে মানতে নারাজ মন্ত্রী তজমুল হোসেন। তজমুল বলেন, ‘আমরা এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিলাম কিন্তু কংগ্রেস সিপিএম বিজেপি এরা অনৈতিকভাবে জোট করে পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত সমিতি দখল করছেন। আগামীতে মানুষ এর জবাব দেবে’।