তপন বকসি, মুম্বই: সত্তর এবং আশির দশকের ভারতীয় হিন্দি সিনেমার পর্দা কাঁপানো নায়িকা পারভিন বাবির বায়োপিকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন ঊর্বশী রাউতেলা। হিন্দিতে পারভিন বাবির বায়োপিক লিখেছেন ধীরাজ মিশ্র। ছবিটি পরিচালনা করতে চলেছেন ওয়াসিম খান। ১৯৫৪ সালের ৪ এপ্রিল ভারতের সৌরাষ্ট্রের জুনাগড়ে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন পারভিন বাবি। ১৯৭৩ সালে ভিন্ন ধারার সিনেমা পরিচালক বি.আর. ইশারার বিতর্কিত সামাজিক ছবি ‘চরিত্র’-এ অভিনয় করে হিন্দি সিনেমার আঙিনায় প্রথম পা রেখেছিলেন পারভিন। অবিভক্ত ভারতের পেশোয়ারের পাখতুনখাওয়ার পাঠান বংশের মেয়ে পারভিন বাবি। দেশভাগের পর পারভিনের পরিবার গুজরাটের জুনাগড়ে চলে আসে। মূলত তিনি গুজরাটের পাঠান পরিবারের মেয়ে। আমেদাবাদের মাউন্ট কার্মেল হাইস্কুল এবং পরে গুজরাটের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক হবার পর ১৯৭২ সালে মডেলিং-এর দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন পারভিন।
মাত্র এক বছরের মধ্যেই তিনি হিন্দি সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান। সেইসময়ই হিন্দি সিনেমার জগতে দেব আনন্দের হাত ধরে হিন্দি সিনেমার অভিনয় জগতে এসেছিলেন আর এক লাস্যময়ী অভিনেত্রী জিনাত আমন। পেশাগত জীবনে স্মিতা পাতিল ও শাবানা আজমির প্রতিযোগিতার কথা যেমন বারবার সামনে এসেছে। তেমনই ৭০ দশকের শুরুতে হিন্দি সিনেমায় লাস্যময়ী নায়িকা হিসেবে জিনাত আমান ও পারভিন বাবির মধ্যেকার প্রতিযোগিতার কথা উঠে এসেছিল বারবার। পারভিন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ছবি অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে ‘মজবুর’। পরবর্তীকালে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের গুঞ্জন বলিউডে চর্চিত হয়েছে বহুবার। ব্যক্তিগত জীবনে পরভিন ঘনিষ্ঠ প্রেমের জীবনে জড়িয়ে পড়েছিলেন অভিনেতা কবীর বেদি ও ড্যানি ডেনজংপার সঙ্গে। তারপরেই হিন্দি সিনেমার পরিচালক মহেশ ভাটের সঙ্গে পারভিন ববির ব্যক্তিগত জীবনের ঘনিষ্ঠতা তোলপাড় তুলেছিল বলিউডে।
১৯৮২ সালে হিন্দি সিনেমার দর্শকদের কাছে সাড়া ফেলা, মহেশ ভাট পরিচালিত সংবেদনশীল ত্রিকোণ প্রেমের ছবি ‘অর্থ’ মহেশ ভাট ও পারভিন বাবির বর্ণময় ও বিতর্কিত প্রেমের জীবনকে ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছিল। আশির দশকের প্রথম ভাগে ব্যক্তিগত জীবনে মহেশ ভাটের সঙ্গে তৈরি হওয়া ঘনিষ্ঠ প্রেমের জীবন ভেঙে যাবার পরেই পরভিন বাবি প্যারানয়েড স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন। সেই সঙ্গেই হিন্দি সিনেমার রুপোলি পর্দার সোনালি উপস্থিতি থেকে ধীরে ধীরে ফিকে হতে থাকে পরভিন বাবির অস্তিত্ব। আশির দশকের শুরুতে স্কিৎসোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া পারভিন বাবি কম-বেশি সেই রোগকে বহন করেছিলেন ২৫ বছর ধরে। অবশেষে ৫০ বছর বয়সে পারভিন বাবির মৃত্যু হয়। ২০০৫ সালের ২০ জানুয়ারি মুম্বইয়ের জুহু ইসকন মন্দিরের উলটো দিকের অ্যাপার্টমেন্টে মারা যাওয়ার দুদিন পর আবিষ্কার করেছিলেন তাঁর প্রতিবেশীরা।
এহেন বর্ণময়, ঘটনাবহুল ও ট্র্যাজিক জীবন অধিকারিণী পারভিন বাবির বায়োপিকে অভিনয় করতে গিয়ে ঊর্বশী রাউতেলা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে লিখেছেন, ‘পারভিন বাবি… বলিউড ব্যর্থ হলেও আপনাকে আমি গর্বিত করব।‘