উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্কঃ বুধবার প্রকাশিত হয়েছে বামফ্রন্টের পঞ্চায়েত ভোটের ইস্তাহার। ইস্তেহারে কেন্দ্রের মোদি সরকারের সমালোচনা করার পাশাপাশি অভিযোগ করা হয়েছে সিবিআই, ইডি এবং আয়কর দপ্তরকে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ চরিতার্থ করতে। তাদের বর্ণনা করা হয়েছে ‘দমনপীড়নের হাতিয়ার’ বলে। দীর্ঘদিন ধরে এই কথাই বলে এসেছেন তৃণমূলের দুই প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাহলে তৃণমূলের লাইনেই কি চলছে সিপিএম? উঠেছে প্রশ্ন।
বামেদের নির্বাচনী ইস্তেহারে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তৃণমূলের সুর, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। যদিও একথা মানতে চাইছেন না সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতারা। তাঁদের পালটা যুক্তি, তৃণমূল-বিজেপি যোগের ফলে সিবিআই দোষীদের শাস্তি দিতে অক্ষম। ইডি সিবিআই রাজ্যে একাধিক দুর্নীতির তদন্ত করলেও তাঁদের সাফল্য কোথায়? তবে ইস্তেহারে তৃণমূলের সঙ্গে বামেদের অনেকাংশেই মিল থাকায় বামফ্রন্টের অন্দরেই অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। যদিও এবারের ইস্তেহারে তৃণমূল বিজেপিকে এক আসনে রেখেই রাজনৈতিক আক্রমণ শানিয়েছে বামফ্রন্ট। তাঁদের মতে, ইডি-সিবিআই-আয়কর দপ্তর নিয়ে তাঁদের ওই ‘পর্যবেক্ষণ’ একনিষ্ঠ এবং একক। তার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। তাদের সুরে সুর মেলানো তো দূরস্থান!
বামফ্রন্টের ইস্তেহারে উল্লেখ রয়েছে, সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতরকে দমনপীড়নের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে।’’ ওই ইস্তেহার পত্রে সম্মতি দিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়, আরএসপি নেতা তপন হোড়, আরসিপিআই নেতা সুভাষ রায়, মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের আশিস চক্রবর্তী, ওয়ার্কাস পার্টির নেতা শিবনাথ সিন্হা এবং বলশেভিক পার্টির প্রবীর ঘোষ।
এই প্রসঙ্গে সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের দাবিকে কখনওই এক করে দেখা উচিত নয়। কারণ, আমরা দশকের পর দশক ধরে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে বলে আসছি। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বরাবর সিবিআই তদন্তের পক্ষেই সওয়াল করে এসেছিলেন! এখন তাঁর দলের চুরি কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় বিরোধিতা করছেন। আবার কোনও দিন হয়তো সিবিআইয়ের পক্ষেই কথা বলবেন। আমাদের অভিযোগের সঙ্গে তৃণমূলের অভিযোগকে এক করে দেখা ঠিক হবে না।’’
ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেনের কথায়, ‘‘আমাদের ও তৃণমূলের দাবির মধ্যে তফাত আছে। সিবিআই-ইডি অভিযুক্তদের ধরছে না। শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থাও করতে পারছে না। শুধু খোঁচা দিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি হয়ে থাকলে দোষ প্রমাণ করে শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির। সারদা-নারদ তদন্তের তো কত দিন হয়ে গেল। এখনও কোনও ফল হয়নি।’’
বর্ষীয়ান আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা ইডি বা আয়কর দপ্তরকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক ব্যবহারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছি। পশ্চিমবঙ্গে সিবিআই-সহ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে। সে বিষয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করতে পারি না। কিন্তু গত দু’বছরে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি এ রাজ্যে ৩৬৫টি কেস হাতে নিয়েছে। ৪০০-র বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু শাস্তির হার মাত্র ১২ শতাংশ!”