অরিন্দম বাগ, মালদা: মালদা জেলার আম ও রেশমচাষ আন্তর্জাতিক স্তরেও বিখ্যাত। বর্তমানে মালদার আম আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছোলেও মালদার রেশমের সুতো চিন-জাপানের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারত না। এমনকি হাত রিলিং মেশিনে কোকুন থেকে রেশম সুতো তৈরি করার কারণে ব্যাঙ্গালুরুর সুতোরও মালদার সুতোর থেকে বেশি চাহিদা ছিল। তবে ফের সোনালি দিনে ফিরতে চলেছে মালদার রেশমশিল্প। আর কিছুদিনের মধ্যে মালদার রেশম সুতো চিন-জাপানের সুতোর সঙ্গে টেক্কা দেবে বলেও আশা করছেন মালদার রেশমশিল্পের সঙ্গে যুক্ত শিল্পীরা।
উল্লেখ্য, এক সময় মালদার রেশমশিল্পের বিস্তর খ্যাতি ছিল। মুঘল আমলেও নাকি এখানের রেশমচাষ করা হত। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রেশমশিল্পের সেই খ্যাতি এবং চাহিদা কমতে শুরু করে। হাত রিলিং মেশিনে কোকুন থেকে রেশম সুতো তৈরি হওয়ায় সুতোর গুণমান খুব একটা ভালো হত না। চিন-জাপানের সরু সুতোর সামনে মালদার সুতো অনেকটা পিছিয়ে পড়ত। পুরোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করে রেশম সুতো তৈরি করায় বাজার পড়তে শুরু করে। বহু রেশম চাষি বাধ্য হয়ে পেশাও পরিবর্তন করে ফেলেন। সম্প্রতি মালদার রেশম শিল্পের ওপর বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে সরকার।
কেন্দ্র ও রাজ্যের উদ্যোগে প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে মালদায় বসেছে ১০টি অত্যাধুনিক মাল্টি এন্ড রিলিং মেশিন। ইতিমধ্যে মেশিনগুলির ট্রায়াল রানও শুরু হয়েছে। এই যন্ত্রের সাহায্যে এবার মালদা জেলা থেকেই তৈরি হবে উন্নত মানের রেশম সুতো। জেলার রেশম সুতোর বহির্বাণিজ্যের সম্ভাবনার পাশাপাশি জেলায় বড় ধরণের রেশমি কাপড়ের শিল্পস্থাপন হওয়ার সম্ভাবনাও দেখছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা।
রাজ্য রেশম দপ্তরের জয়েন্ট ডিরেক্টর (উত্তরবঙ্গ) অরূপ ঠাকুর জানান, রাজ্যের মোট রেশমের ৭০ শতাংশই উৎপাদিত হয় মালদা জেলায়। আপাতত মালদা জেলায় ১০টি মাল্টি এন্ড রিলিং মেশিন বসানো হয়েছে। মূলত পুরোনো রিলার ও কয়েকটি রেশম সমবায়কে সেই মেশিন দেওয়া হয়েছে৷ এই মেশিনের যাবতীয় খরচ সরকারের তরফেই করা হচ্ছে। এই মেশিন ব্যবহারের ফলে সুতোর গুণগত মান অনেক বেড়ে যাবে। আগে হাত রিলিং মেশিনে সুতো তৈরি হওয়ার ফলে সেই সুতো বিদেশে পাঠানো যেত না। নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুতো তৈরি হওয়ায় দেশ ও বিদেশে মালদার রেশম সুতোর চাহিদা বাড়বে।
এক রিলার মহম্মদ আনসারুল শেখ বলেন, ‘মালদা জেলার রেশম সুতোর গুণগত মান বাড়াতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই মেশিনের দাবি করছিলাম। অবশেষে সরকারিভাবে এই মেশিন বসানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ট্রায়াল রানও শুরু হয়েছে। এবার চিন-জাপান-ব্যাঙ্গালুরুর সঙ্গে মালদার সুতো টেক্কা দেবে। তবে এই মেশিনে অনেক সুতো অপচয় হচ্ছে। সেই কারণে আমাদের সিড মেশিনও প্রয়োজন। সরকারের কাছে আমরা সিড মেশিন দেওয়ার জন্যও আবেদন জানাচ্ছি।‘