বালুরঘাট: ভোট এলেই তাদের আনন্দের শেষ থাকে না। ভোটের মরশুমে দেদার দেয়াল লিখনে মত্ত হয়ে থাকেন তারা। নিজেদের চিত্রশিল্পী হিসেবে তুলে ধরতে চাইলেও দেয়াল লিখনকর্মী হিসেবেই তারা বেশি পরিচিত। তবে ভোটের মুখে কদর বাড়লেও ভোট পেরোলেই তাদের খোঁজ কেউ রাখে না বলে আক্ষেপ বালুরঘাটের শিল্পীদের।
আগামী মাসেই বালুরঘাট কেন্দ্রের লোকসভা ভোট। ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলি তাদের দেয়াল লিখনের মাধ্যমে সিংহভাগ প্রচার সেরে নিচ্ছেন। বালুরঘাটের একাধিক জায়গায় বিভিন্ন দেয়ালে এখনও দেয়াল লিখন চলছে। শুধু লোকসভা ভোট নয়, বিধানসভা বা পুরসভা ভোটের আগেও দেয়াল লিখনের তোড়জোড় চলে আসছে বহুকাল ধরে। বিভিন্ন দলীয় প্রতীকের অবিকল ছবি এঁকে দিতে সিদ্ধহস্ত এই শিল্পীরা। শুধু প্রতীক চিহ্ন নয়, ক্যারিকেচার থেকে শুরু করে ক্যালিগ্রাফিতেও তারা যথেষ্ট পটু। কিন্তু যাঁদের তুলির ছোঁয়া নিতে দেয়াল বুক পেতে দেয়। ভোটের হাওয়া উধাও হতেই সেই শিল্পীদের কথা মনে রাখে কজন? ভোট টানার প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগেও দেয়াল লিখন এখনও নিজস্ব মর্যাদা ধরে রেখেছে। কিন্তু ভোটের মরশুমে দেয়াল লিখন শিল্পীদের মুখে হাসি ফুটলেও, সারাবছর তাদের দিনপাতের খবর অজানাই থেকে যায়।
বঙ্গি বাদুরতলার শিল্পী শুভ সরকার বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থনে দেয়াল লিখন করে আসছি। কর্মক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে কোনও রাজনৈতিক বিভেদ নেই। আমাদের কথা আগেও ভাবা হয়নি, আজও হয় না। খুব সামান্য মজুরি পই। সেই থেকেই আবার দেয়াল লিখনের রং কিনতে হয়। বিল দেওয়ার সময় অনেকেই কম টাকা দিতে চায়। ফাঁকা বসে থাকার চেয়ে কর্মে নিযুক্ত থাকার জন্যই দেয়াল লিখন করি। ভোট পার হলেই খোঁজখবর নেওয়ার লোক থাকে না।’
মঙ্গলপুরের শিল্পী মন্মথ মহন্ত জানান, ‘গত ৩৩ বছর ধরে দেয়াল লিখন করছি। ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ সরিয়ে রেখেই আমরা দেয়াল লিখনের কাজে মনোনিবেশ করি। এখন ফ্লেক্সের বাড়বাড়ন্ত দেয়াল লিখনের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের তরফে কোনোও আর্থিক সাহায্য পাই না। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে দেয়াল লিখনের মজুরিও যথেষ্ট কম। ১৫০ টাকা প্রতি দেয়াল হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে। অনেক সময় সেটা নিয়েও দরদাম হয়।’
আরেক চিত্রশিল্পী রূপ মণ্ডল বলেন, ‘দেয়াল লিখন শিল্পীদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা চলছে। আমি ১৫০ টাকা দাবি করলে অন্যজন ১২০ দিয়ে করতে রাজি হয়ে যাচ্ছে। এভাবে দর কমিয়ে তাঁরা নিজেদের পেটেই লাথি মারছেন। অনেকেই ছোটদের আঁকা শেখানোর কাজে সারাবছর যুক্ত থাকায় সংসারটা চলে যায়।’