অর্ঘ্য বিশ্বাস, ময়নাগুড়ি: পাহাড় থেকে সমতল, সব জায়গার বনাঞ্চলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে গত কয়েকদিনে। বন দপ্তর জানিয়েছিল, অনেকদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় এই অগ্নিকাণ্ড। বন সংলগ্ন এলাকা তো বটেই, ধোঁয়ায় ভরে যাচ্ছিল শহরও। এই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় যেন প্রকৃতিই বাতলে দিল। গত দু’তিনদিনের বৃষ্টিতে সব জায়গার জঙ্গল যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টিতে জঙ্গলে ঝরাপাতায় আগুন একদিকে চিন্তা বাড়াচ্ছিল। অন্যদিকে, বনাঞ্চলে বাড়ছিল জলের কষ্ট। শুখা মরশুমে এই ভোগান্তি প্রত্যেক বছরের। চলতি বছরও ডুয়ার্সের বনাঞ্চল থেকে শিলিগুড়ি সংলগ্ন বৈকুণ্ঠপুর জঙ্গল, পাহাড়ে কার্সিয়াং, মিরিক ইত্যাদি এলাকার ছবিটা সপ্তাহখানেক ধরে একই ছিল। জঙ্গলের ক্ষতির পাশাপাশি বন্যপ্রাণীদের প্রাণের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছিল। মারা গিয়েছে কীটপতঙ্গ সহ বিভিন্ন পাখি, শাবক। নষ্ট হয়েছে প্রচুর পাখির ডিম।
কয়েকজন মানুষের খামখেয়ালিপনার সঙ্গে একশ্রেণির মানুষ ইচ্ছাকৃতভাবে জঙ্গলে আগুন লাগায়। এইরকম ঘটনা রুখতে বনকর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় টহলদারি চালালেও একই সময়ে একাধিক জায়গায় আগুন লাগায় সমস্যা হয়। তাছাড়া, বন দপ্তরের কাছে পর্যাপ্ত কর্মী না থাকাতেও সবটা সামাল দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। ডুয়ার্সের এক পরিবেশপ্রেমী অনির্বাণ মজুমদারের কথায়, ‘একশ্রেণির মানুষ কিংবা চোরাশিকারিরা অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে জঙ্গলে ইচ্ছাকৃতভাবে আগুন লাগিয়ে দেয়। যার মাশুল গুনতে হয় গাছপালা, কীটপতঙ্গ সহ বনের পশুপাখিদের। এসব যাতে না হয়, সেজন্য বন দপ্তরের পাশাপাশি বিভিন্ন পরিবেশপ্রেমী সংগঠন সচেতনতামূলক প্রচার চালায়, কিন্তু তারপরেও প্রতিবছর নিয়ম করে এসব ঘটে।’
কিন্তু মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি এই বিপদ থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতির কোলে গাছপালায় নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। গাছে পাতা গজাতে শুরু করেছে। বৃষ্টি হওয়ায় খুশি বন্যপ্রাণীরাও।
বন দপ্তরের জলপাইগুড়ি বন বিভাগের ডিএফও বিকাশ ভি বলেন, ‘বনকর্মীরা আগুন নেভানোর জন্য সবসময় তৎপর। তবে এসময়ের বৃষ্টিতে আগুন লাগার মতো ঘটনা অনেকটাই কমবে। পাশাপাশি বনাঞ্চলে জলের ঘাটতি কিছুটা হলেও কমবে।’
তিনি জানান, চলতি মরশুমে বনাঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডে তেমন কোনও বড় ক্ষতি হয়নি। এরপর আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন প্রযুক্তির মেশিন আনার ব্যবস্থা করছে বন দপ্তর।