শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ির বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে নথিপত্রহীন গাড়ি চলছে। এই গাড়িতেই চড়ছেন শিলিগুড়ির মহকুমা শাসক থেকে শুরু করে বিভিন্ন আধিকারিক এবং কর্মীরা। অথচ গাড়িগুলির বিমা, ফিটনেস, দূষণ নিয়ন্ত্রণের শংসাপত্র সহ অন্যান্য কোনও নথিপত্রই ঠিকঠাক নেই। দুর্ঘটনা ঘটলে আরোহীরা কেউ বিমার সুযোগ পাবেন না। অথচ বছরের পর বছর এভাবেই শিলিগুড়িতে বেআইনিভাবে গাড়িগুলি চলছে। সবকিছু দেখেশুনেও শুধুমাত্র সরকারি লেবেল সাঁটা থাকায় ট্রাফিক পুলিশও কোনও পদক্ষেপ করছে না।
গত বছর উত্তরবঙ্গ সংবাদে এই বিষয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর জেলা শাসক প্রতিটি দপ্তরকে চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চলা গাড়ির বিস্তারিত তথ্য চেয়েছিলেন। সেখানেই শেষ। বিষয়টি আর এগোয়নি। সাধারণ মানুষকে ট্রাফিক পুলিশ প্রতিনিয়ত হয়রানি করলেও সরকারি দপ্তরের গাড়িগুলিকে কেন এভাবে ছাড় দেওয়া হচ্ছে, সেই প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ, এই গাড়িগুলি বিনা ভাড়ায় খাটাচ্ছে সরকারি অফিসগুলি। শিলিগুড়ির এক র্যাশন মাফিয়া বেনামে প্রচুর গাড়ি কিনে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে দিয়ে রেখেছেন। প্রশাসনও বিনা ভাড়ায় গাড়িগুলি পেয়ে যাওয়ায় চুপচাপ ব্যবহার করছে। দার্জিলিংয়ের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক সোনম লেপচা বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলেই দায় সেরেছেন।
শিলিগুড়ি মহকুমা শাসকের দপ্তর, অতিরিক্ত আঞ্চলিক পরিবহণ দপ্তর, মাটিগাড়া সহ একাধিক ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার অফিসের গাড়ির কোনও নথিপত্রই আপ টু ডেট নেই। অথচ বছরের পর বছর এভাবেই গাড়িগুলি ব্যবহার হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি এবং মোটর বাইকের নথিপত্র একদিন মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলেই ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় গাড়ি আটকে মোটা টাকা জরিমানা করছে। অথচ বছরের পর বছর শহরে এভাবে মহকুমা শাসক, পরিবহণ দপ্তর, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের গাড়ির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপই করা হচ্ছে না। পুলিশের এই ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
শিলিগুড়ি ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেছেন, ‘সবই তো জানেন, বোঝেন। তাহলে আমাদের কেন এসব বিষয়ে জড়াতে চাইছেন।’ বিমা সংস্থার কর্মী অম্লান দাস বলেন, ‘বিমা, ফিটনেস, পলিউশনের নথিপত্র না থাকা গাড়িগুলি কোনও দুর্ঘটনায় পড়লে গাড়ি এবং চালক সহ যাত্রীরা কোনও ক্ষতিপূরণ পাবে না। ওই গাড়ির ধাক্কায় কেউ মারা গেলে তিনিও কোনও ক্ষতিপূরণ পাবেন না।’
মহকুমা শাসকের অফিস সূত্রের খবর, কয়েকটি অফিস মিলিয়ে মহকুমায় অন্তত ১৫-১৬টি গাড়ি চলে। গাড়িগুলি বকলমে বিমল রায় নামে এক র্যাশন ব্যবসায়ীর। তাঁর বিভিন্ন আত্মীয়ের নামে গাড়িগুলি রয়েছে। বকলমে তাঁর নামই অফিসের নথিতে লেখা রয়েছে। ওই ব্যবসায়ী গাড়ির কোনও বিল নেন না। চালকের বেতনও তিনিই মেটান। সরকারি অফিস থেকে শুধু জ্বালানির খরচ বহন করতে হয়। ওই ব্যবসায়ী কীসের স্বার্থে বছরের পর বছর বিনা পয়সায় গাড়ি দিয়ে রেখেছেন তা তিনিই বলতে পারবেন।