সানি সরকার, শিলিগুড়ি: বরফের তল কোথায়, জলই বা কতটা, ভবিষ্যতের সুরক্ষায় বরফ হ্রদে পরিমাপ করতে চাইছে সিকিম। সাউথ লোনাক লেক বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার কেন্দ্রের নির্দেশে এই সিদ্ধান্ত পাহাড়ি রাজ্যটির। সাউথ লোনাক লেক তো বটেই, বরফ এবং জলের পরিমাপ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে সাকোচুর ক্ষেত্রেও।
সিকিম ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘সাউথ লোনাক লেকের বিপর্যয়ের পরেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। তারই অঙ্গ হিসেবে এখানকার গ্লেসিয়ার লেকগুলির (হিমবাহ হ্রদ) বরফের পরিমাণ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত। রিমোট সেন্সিং সার্ভের মাধ্যমে একটি রিপোর্ট তৈরি করে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে।’
উল্লেখ্য, ৪ অক্টোবর বিপর্যয় ঘটে সাউথ লোনাক লেকে। যার জেরে ত্রাস হয়ে ওঠে তিস্তা। প্রচুর মানুষের মৃত্যু যেমন ঘটে, তেমনই তিস্তার দুই প্রান্তে পলির পাহাড় তৈরি হয়। যা নতুন বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে পাহাড় তো বটেই, সমতলের বিস্তীর্ণ এলাকার কাছে।
সাউথ লোনাক লেকের বিপর্যয়ে তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন তো হয়েইছে, দুই পাশে জমে থাকা পলি নিয়ে আশঙ্কাও বাড়ছে দিন-দিন। ভারী বর্যায় কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় সেচ এবং কৃষি দপ্তর। এমন পরিস্থিতিতে সাউথ লোনাক লেক, সাকোচু, গুরুদুম্বার হ্রদগুলির ওপর নজরদারি বাড়াতে চাইছে সিকিম প্রশাসন। যে কারণে বরফের পরিমাণ এবং জল স্তরের হদিস পাওয়ার চেষ্টা।
কিন্তু কীভাবে এই কাজ হতে পারে? দেরাদুনের ওয়াদিয়া ইনস্টিটিউট ইফ হিমালয়ান জিওলজি-র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ডঃ অরিন্দম চৌধুরীর বক্তব্য, ‘তুষারের গভীরতা পরিমাপ করার ক্ষেত্রে তুষার সেন্সর ব্যবহার করা হয়। এই সেন্সরের সাহায্যে বরফ এবং ভূপৃষ্ঠের মধ্যে দূরত্ব পরিমাপ করা সম্ভব। লেজার রেঞ্জিং প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এই দূরত্ব পরিমাপ করা সম্ভব।’
ভবিষ্যতের দিকে নজর দিয়েই সাউথ লোনাক লেকে আর্লি অ্যালার্মিং সিস্টেম কার্যকরের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৪ অক্টোবর লেকটির বিপর্যয়ের জেরে তা আর কার্যকর করা হয়নি। বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে বেশ কয়েকটি দিক সামনে চলে আসে, তার মধ্যে আয়তন বৃদ্ধি এবং প্রয়োজন মতো জল বের হতে না পারা অন্যতম। অরিন্দম মনে করেন, নজরদারিটা অত্যন্ত প্রয়োজন। কেননা, তাতে জল স্তর বৃদ্ধি হলে প্রয়োজন মতো জল ছাড়া সম্ভব হবে। তাতে কিছুটা হলেও বিপর্যয় রোখা সম্ভব।