ধূপগুড়ি: চাকরির বদলে কাটমানি চেয়েছেন নেতারা। আর তাতেই বেঁকে বসেছেন জমিদাতারা। অগত্যা আটকে রয়েছে ‘জল জীবন’ প্রকল্প। ঘটনাটি ধূপগুড়ির ঝাড়আলতা গ্রাম পঞ্চায়েতের। পুরো ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে তৃণমূলের ঝাড় আলতা-১ অঞ্চল কমিটির সভাপতি হরিচরণ রায় ও আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে। কাটমানির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন দলেরই এক বুথ সভাপতি গোপাল রায়। প্রশাসনের সর্বস্তরে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। সবমিলিয়ে মহাফাঁপরে পড়েছে তৃণমূল।
এলাকায় পানীয় জলের রিজার্ভার তৈরির জন্য একটি জমি চূড়ান্ত করে ছাড়পত্রও দিয়ে দিয়েছেন প্রধান সরস্বতী রায়। কিন্তু স্থানীয় ও দলের একাংশের আপত্তিতে সেখানে কাজ শুরু করা যায়নি। মূলত রিজার্ভার তৈরি হলে সেখানে জমিদাতার পরিবারের একজনকে পাম্প চালানোর চাকরি দেওয়া হয়। সেই চাকরির জন্যই কাটমানি চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
তৃণমূলের বুথ সভাপতির অভিযোগ, প্রথমে একজনের জমিতে রিজার্ভার তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তাঁর কাছে দেড় লক্ষ টাকা কাটমানি চাওয়া হয়েছিল। পরে অন্য একজন দ্বিগুণ টাকা দিতে রাজি হওয়ায় তাঁর জমিটিই চূড়ান্ত করা হয়। গোপাল বলছেন, ‘এলাকায় একটি পানীয় জলের রিজার্ভার তৈরি করা হবে। ওই রিজার্ভার কোন জমিতে হবে তা নিয়েই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। চাকরির বিনিময়ে কাটমানি নিয়ে মূলত ঝামেলা।’ ইতিমধ্যে জেলা শাসক, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর, দলের অঞ্চল ও গ্রামীণ সভাপতিদের চিঠি দিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, গ্রামে ভিলেজ ওয়াটার স্যানিটেশন কমিটি থাকলেও তাদের সঙ্গে কথা না বলে প্রধান নিজের ক্ষমতাবলে দ্বিতীয় জমিটিতে ছাড়পত্র দিয়েছেন। যদিও প্রধান সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, ‘অনেকেই চাপে পড়ে টাকা নিয়ে উলটোপালটা বলে যাচ্ছে। একটি জমিতে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে সমস্যা হওয়ায় বিষয়টি দল এবং প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।’ সরকারি প্রকল্প হলেও প্রধান কীভাবে বিষয়টি নিয়ে দলের সঙ্গে আলোচনা করলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
তৃণমূলের দু’পক্ষের ঝামেলায় জলপ্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে চাপের মুখে পড়েছেন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের আধিকারিকরা। তাঁরা ধূপগুড়ির বিডিও জয়ন্ত রায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন। বিডিও অবশ্য এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য ও বাকিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। তাতে কোনও রফাসূত্র বের হয়নি। বিডিও বলছেন, ‘গ্রামে ভিলেজ ওয়াটার স্যানিটেশন কমিটি রয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তাদের রেজোলিউশন দেখেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
যাঁর বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ উঠেছে, সেই হরিচরণকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে, ধূপগুড়ির গ্রামীণ তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দীপু রায় বলছেন, ‘কাটমানির বিষয়টি প্রমাণসাপেক্ষ। তবে কেউ যদি এমনটা করে থাকে, তাহলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর বাকি বিষয়টি যেহেতু প্রশাসনিক, তাই প্রশাসন সেটা সামলাচ্ছে।’