উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: গর্ভাবস্থায় মেয়েদের ওজন বাড়াটা একটা শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। ওজন বেশি বাড়ে গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় পর্যায়ে, কিন্তু তার সঙ্গে ওবেসিটির যোগটা খুব ঘনিষ্ঠ, তা একে অপরের হাত ধরে চলেও বলা যায়। এবার আসা যাক, ওবেস হয়ে পড়লে এই সময়ে কী কী সমস্যা হতে পারে, সেই প্রসঙ্গে চিকিৎসকরা জানান, প্রথমত, জেস্টেশনাল ডায়াবিটিস মেলিটাস হতে পারে। স্বাভাবিক ওজনের গর্ভবতী মহিলার চেয়ে ওবেস মহিলাদের এই উপসর্গে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা পাঁচগুণ বেশি। ওবেসিটি থাকলে প্রি একল্যাম্পশিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে, বাড়তি ওজনের কারণে যে সব প্রদাহজনিত সমস্যায় ভোগে মানুষ, সেগুলোও হতে পারে।’
গর্ভাবস্থায় একজন মহিলা কতটা খাচ্ছেন, কী খাচ্ছেন, তার ফলে শরীর কতটা পুষ্টি পাচ্ছে, কত ক্যালোরি খরচ হচ্ছে, তাতে মায়ের ওজন কীভাবে বাড়ছে এবং ভ্রূণের বাড়বৃদ্ধির হারই বা কী হবে- এই পুরো ব্যাপারটার সমীকরণ অত্যন্ত জটিল। নানা প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট গর্ভবতীর থেকেই পায় তার সন্তান, তাই মায়ের শরীরে পুষ্টির ভারসাম্য ঠিক থাকা জরুরি। হাই-প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট গর্ভবতী মহিলাদের জন্য আদর্শ নয়। মা যদি হাই-ফ্যাট ডায়েটে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, তা হলে শিশুর শরীরে বডি ফ্যাটের পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি হয়। সেই সঙ্গে বাড়ে জেস্টেশনাল ডায়াবেটিসের আশঙ্কা। মা কী ধরনের কার্বোহাইড্রেট খাচ্ছেন, সে বিষয়েও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়। কার্বোহাইড্রেটের উৎসগুলিকে লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও হাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্স, এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথমটিতে থাকে নানা ধরনের পালিশ না হওয়া দানাশস্য, লাল চাল, বিনস, বেশিরভাগ ফল, বাদাম, দুধজাতীয় খাবার। হাই জিআইয়ের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ময়দা, প্যাকেটজাত সিরিয়াল, পাউরুটি, আলু, গাজরের মতো সবজি, কেক-বিস্কুট, পাকা কলা, খুব মিষ্টি ফল ইত্যাদি। মা যদি হাই গ্লাইসেমিক ইনডেক্সসমৃদ্ধ খাদ্যে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন, তা হলে ঋণাত্মক প্রভাব পড়ে সন্তানের স্বাস্থ্যে। প্রচুর পরিমাণ ফাইবার খাওয়া একান্ত প্রয়োজনীয়, তাতে এড়ানো যায় জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস ও প্রি এক্ল্যাম্পশিয়ার আশঙ্কা।’’
মনে রাখবেন, গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাসে ক্যালোরি ইনটেক অতিরিক্ত বাড়ানোর দরকার নেই, দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টারে প্রতিদিন ৩৪০ ক্যালোরি ও শেষ ট্রাইমেস্টারে রোজ ৪৫০ ক্যালোরি বাড়ালেই চলবে। দৈনিক খাদ্যতালিকায় থাকবে ১৭৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৬০-৭০ গ্রাম প্রোটিন, ২৮ গ্রাম ফাইবার। মোট এনার্জি কনটেন্টের ২৫ শতাংশ জোগাবে প্রোটিন। যাঁদের ওজন বেশি, তাঁরা এনার্জি ইনটেক না বাড়িয়ে এই পরিমাণ মেনেই ব্যালেন্সড ডায়েট খান।