মণীন্দ্রনারায়ণ সিংহ, আলিপুরদুয়ার: রবিবার ট্র্যাপ ক্যামেরায় (Trap Camera) ধরা পড়া ঢোলের ছবি প্রকাশ করল বন দপ্তর। ছবিতে দুটো ঢোলকে দেখা যাচ্ছে। তবে বক্সার জঙ্গলে (Buxa Jungle) ওয়াইল্ড ডগ (Wild Dog) বা ঢোলের সংখ্যা কি বাড়ছে? বন দপ্তরের দাবি, বক্সার জঙ্গলে শতাধিক ঢোল অনেকগুলি দলে বিভক্ত হয়ে রয়েছে। এর আগে জানুয়ারিতেও বক্সার জঙ্গলে পাতা ট্র্যাপ ক্যামেরায় ঢোলদের একটি ছবি প্রকাশিত হয়। পরের মাসে ফের তাদের দেখা মেলায় বন দপ্তরের অনুমান, জঙ্গলে ঢোলদের সংখ্যা বেড়েছে।
ওয়াইল্ড ডগ বা ঢোলদের প্রিয় খাবার হরিণ। গত এক বছরে বক্সার জঙ্গলে ঢোলদের শিকার করা পাঁচটি হরিণের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। বক্সা টাইগার রিজার্ভের (Buxa Tiger Reserve) ডিএফডি পারভিন কাশোয়ান বলেন, ‘বক্সার জঙ্গলে ঢোল তথা ওয়াইল্ড ডগ বেশ ভালো সংখ্যায় রয়েছে। মাঝেমধ্যেই ট্র্যাপ ক্যামেরায় সেটা ধরা পড়ছে। একেকটি দলে পাঁচ থেকে দশটি করে থাকতে ভালোবাসে।’ ডিএফডি মনে করেন, বর্তমানে বক্সার জঙ্গলে ঢোলের সংখ্যা একশোরও বেশি। বনকর্তারা জানিয়েছেন, এতে স্পষ্ট যে বক্সার জীববৈচিত্র্য ভালো অবস্থায় রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পাহাড় ঘেঁষা বনাঞ্চলে কিংবা পাহাড়ের দিকে কিছুটা উঁচুতে দলবদ্ধভাবে থাকতে বেশি পছন্দ করে এই বন্যপ্রাণীটি। দলবেঁধে বসবাসের পাশাপাশি তারা একসঙ্গে শিকারও করে। বার্কিং ডিয়ার ও স্পটেড ডিয়ার ঢোলদের সবচাইতে পছন্দের খাবার। তবে শুয়োরও তাদের খাদ্যতালিকায় থাকে। রাতের বেলা দলবদ্ধভাবে শিকার করে তারা। বছরখানেকের মধ্যে বক্সার জঙ্গলে টহলদারির সময় বনকর্মীরা জঙ্গলে পাঁচটি হরিণের মৃতদেহ আবিষ্কার করেন। বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে বুঝতে পারেন, হরিণগুলিকে শিকার করেছিল ওয়াইল্ড ডগ। বক্সা টাইগার রিজার্ভের বন্যপ্রাণী চিকিৎসক লিটন পাল বলেন, ‘জঙ্গলের ভেতরে পাওয়া পাঁচটি হরিণের মৃতদেহ পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেখানে জানা যায়, সেগুলি ঢোলরা শিকার করেছিল। তবে খাদ্যশৃঙ্খল যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য সেই মৃতদেহ অন্য জায়গায় সরানোও হয়নি। তবে ঢোলরা জঙ্গলে পাহাড়ের দিকে একটু উঁচু স্থানে থাকতে বেশি পছন্দ করে। বক্সার জঙ্গলে আগে থেকেই ঢোলরা ছিল। এখন মনে হচ্ছে এদের সংখ্যা বেড়েছে।’
বক্সার জঙ্গলে পর্যটকদের ক্যামেরায় বিভিন্ন সময় ঢোলের ছবি ধরা পড়েছে। কয়েকদিন আগে জয়ন্তীতে জঙ্গল সাফারির সময় কলকাতার এক পর্যটক ঢোলের ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন বলে দাবি করেন। এর আগেও অনেকে সেই দাবি করেছেন। ঢোলরা স্বভাবত খুবই হিংস্র প্রাণী। যদিও সাফারি এলাকার থেকে দূরেই বাস এই বন্যপ্রাণীদের। তবে সামনে পড়লে দলবদ্ধভাবে থাকা ওয়াইল্ড ডগদের হাত থেকে বাঁচা অসম্ভব বলে দাবি বনকর্তাদের। সেজন্য বক্সার জঙ্গলের পথে যাতায়াতের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত বলে তাঁদের পরামর্শ।