বুনিয়াদপুরঃ ডাইনি অপবাদ দিয়ে এক আদিবাসী বিধবাকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল প্রতিবেশী আত্মীয়দের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ওই মহিলাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল। প্রাণভয়ে দিন কাটানো ওই মহিলাকে ব্লক প্রশাসন ও বিজ্ঞানমঞ্চের তরফে সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাতদিন পরেও সেই আশ্বাস বাস্তব হয়নি। এরই মধ্যে সোমবার রাতে নিজের বিবাহিতা ছোট মেয়ের হাতে মার খেয়ে এবং একমাত্র ছেলের তরফে খুনের হুমকি পেয়ে প্রাণ বাঁচাতে বিবাহিতা বড় মেয়ে দ্রৌপদীকে সঙ্গে নিয়ে ঘর ছেড়ে পালান ওই মহিলা। প্রাণে বাঁচতে মঙ্গলবার বিডিওর দ্বারস্থ হয়েছেন মঙ্গলা সোরেন।
গত ১৩ মে উত্তরবঙ্গ সংবাদে বংশীহারীর আমকুরিয়া গ্রামের মঙ্গলা সোরেনকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে খুন করার চক্রান্তের খবর প্রকাশিত হয়। বংশীহারী বিডিও এবং দক্ষিণ দিনাজপুর বিজ্ঞানমঞ্চের সম্পাদক অনিমেষ লাহিড়ি মঙ্গলাকে বাঁচাতে সবরকম পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এমনকি সেই গ্রামে কুসংস্কারাচ্ছন্ন আদিবাসীদের বোঝাতে সচেতনতা শিবির করার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু সাতদিনেও তাঁরা কোনও পদক্ষেপ নেননি। অবশেষে এদিন দুপুরে প্রাণে বাঁচার তাগিদে বড় মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মঙ্গলা বিডিওর কাছে ছুটে আসেন।
মঙ্গলা সোরেন বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার আত্মীয়রা ডাইনি সন্দেহে আমাকে প্রচণ্ড মাররধর করে। আমাকে বাঁচাতে আসা ভাইকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। গত রাতে বিবাহিতা ছোট মেয়ে শেফালি মুর্মু আমাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। আমি যেতে অস্বীকার করলে সে আমাকে মারধর করে। অন্যদিকে, দিল্লিতে শ্রমিক হিসাবে কর্মরত একমাত্র ছেলেও ফোনে আমাকে বলে, তুই ডাইনি আছিস। তুই বাড়ি থেকে বের হয়ে যেদিকে চোখ যায় চলে যা। নইলে আমি বাড়ি ফিরলে তোকে কেটেই ফেলব। আমাকে সবাই মেরে ফেলবে বাবু। আমি ডাইনি না। আমাকে বাঁচান স্যর।’
মঙ্গলার মুখে সব শুনে বিডিও সুব্রত বাউল অবাক হয়ে যান। ইতিমধ্যে বিডিও অফিসে বিজ্ঞানমঞ্চের বংশীহারীর প্রতিনিধি গোপা ভট্টাচার্যও হাজির হন। বিডিও ও গোপাদেবী মঙ্গলা সোরেনকে আশ্বস্ত করেন। এদিন সন্ধেয় তাঁরা লোকজন নিয়ে আমকুরিয়া গ্রামে যাবেন বলে মঙ্গলাকে জানান।
বিডিও বলেন, ‘আমি বিজ্ঞানমঞ্চের প্রতিনিধিদের নিয়ে ওই গ্রামে যাচ্ছি। গ্রামে সচেতনতা শিবির করে সবাইকে সচেতন করব। এতে যদি সবাই শুধরে যায় ভালো, নচেৎ তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’