মাটিগাড়া: চাকরির টোপ দিয়ে চা বাগানের তরুণীদের পাচার(Women Trafficking) চলছেই। পরিবারের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দিতে এজেন্টদের প্ররোচনায় ভিনরাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন তাঁরা। কখনও আবার বেনামি পাসপোর্ট বানিয়ে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে দুবাই বা আবু ধাবিতে।
শিলিগুড়ি মহকুমার মাটিগাড়ার গুলমা, শালবাড়ি, ফুলবাড়ি, সুকনা এবং বাগডোগরা সংলগ্ন চা বাগান ঘুরলেই কানে আসবে পাচারের কাহিনী। আসলে বন্ধ বাগানগুলি হল এজেন্টদের ঠিকানা। তাই বাগান(Tea Garden) থেকে মাঝে মাঝেই উধাও হচ্ছেন তরুণীরা। এরপর আর তাদের কখন দেখা যাচ্ছেনা এলাকায়। প্রতিটি বাগানে প্রায় একই পরিস্থিতি এদিন এমনই দাবি করেন, বাগান লাগোয়া এলাকার গ্রামবাসীরা।
গত এক বছর আগে দিল্লিতে পাচার হওয়ার পর দার্জিলিং জেলা লিগ্যাল এইড ফোরামের সাহায্যে শিলিগুড়িতে ফিরে আসা এক যুবতী জানায়, দারিদ্রতা আমাদের একমাত্র শত্রু। আর এরই সুযোগ নেয় এজেন্টরা। আমাকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে দিল্লিতে পাঠানোর ব্যবস্থা করে বাগানেরই এক পরিচিত। লোকের বাড়িতে কাজ করলে বিনিময়ে মাসে আট হাজার টাকা মাইনে দেবে বলা হয়েছিল আমাকে কিন্তু মাসের শেষে মালিকের কাছে মাইনে চাইলে দিতে অস্বীকার করে মালিকরা। উলটে জোটে মারধর। এরপর জানতে পারি ৮০ হাজার টাকায় আমাকে বিক্রি করেছে পরিচিত সেই ব্যক্তি। এরই মাঝে মালিকের কাছে একাধিকবার যৌন হেনস্থার শিকারও হতে হয়েছে। শারীরিক নির্যাতন সহ্য না করতে পেরে কোন মতে ফোনে পুরো ঘটনা জানাই পরিবারকে। এরপর পরিবার দার্জিলিং জেলা লিগ্যাল এইড ফোরামের সঙ্গে কথা বলে পুলিশের মদতে আমাকে উদ্ধার করে।
এদিন দার্জিলিং জেলা লিগ্যাল এইড ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার বলেন, ‘আগে দেখা যেত তরুণী পাচারের সময় বাস কিংবা ট্রেন ব্যবহার করা হত কিন্তু এখন বিমানেও পাচার হচ্ছে। গত এক বছরে উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলি থেকে এলাকায় প্রায় ১০০ জনের বেশি তরুণী পাচার হয়েছে যাদের মধ্যে প্রায় ২৫ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।’
চা বাগান নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে গবেষণা করছেন শিবমন্দিরের বাসিন্দা তথা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সন্দীপন দাস। তিনি বলেন, ‘সকালে বাগানে ঘণ্টার আওয়াজে কাজে যাওয়া এবং বিকেলে ফিরে আসা। এর বাইরের জীবন অনেকটাই অজানা বাগানের শ্রমিকদের কাজে তাই একাধিক স্বপ্ন দেখিয়ে তরুণীদের বড় শহরে বিক্রি করে দেওয়া হয় পঞ্চাশ থেকে আশি হাজার টাকায়। ফলে এজেন্টরা প্রত্যন্ত এলাকার বাগানগুলি থেকে প্রায় প্রতিদিন পাচার করছে তরুণীদের, তার কোনও খোঁজ রাখে না পুলিশ-প্রশাসন।’