উত্তরবঙ্গ সংবাদ ডিজিটাল ডেস্ক: এ যেন রক্তের হোলি! শনিবার সকাল ৭টা থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে পঞ্চায়েত ভোট। এদিকে ভোটগ্রহণ শুরু হতেই বিভিন্ন জায়গা থেকে অশান্তির খবর সামনে আসছে। একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
সবচেয়ে অশান্ত মুর্শিদাবাদ। এখানেই এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। শুক্রবার রাত থেকে জেলায় দফায় দফায় বোমাবাজি ও গোলাগুলি চলছে। মুড়ি মুড়কির মতো বোম পড়ছে। ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগেই কাপাসডাঙায় এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে। খড়গ্রাম ও রেজিনগরে আরও দুই তৃণমূল কর্মী খুন হন। বেলা গড়ালেও অশান্তি অব্যাহত সেখানে। লালগোলায় খুন হয়েছেন এক সিপিএম সমর্থক। একইসময় নওদাতেও প্রাণ খোয়াতে হয় এক কংগ্রেস কর্মীকে। এখানেও তৃণমূলের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ বাঁধে কংগ্রেস কর্মীদের। গুলি চলে বলে অভিযোগ। গুলিতে জখম হন ওই কংগ্রেস কর্মী। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
একইভাবে অশান্ত রয়েছে মালদা। মানিকচক এলাকায় এক তৃণমূল কর্মীকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গুলি লাগার পর তাঁকে মালদা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি ভোটে অশান্তির আঁচ পড়েছে উত্তরবঙ্গেও। কোচবিহারে বিজেপির এক পোলিং এজেন্টকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। কোচবিহারের ফলিমারি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা। এদিন নির্বাচন শুরুর ঘণ্টা খানেক পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকা। গুলি, বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। বিজেপির পোলিং এজেন্ট মাধব বিশ্বাসকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ। এদিন দিনহাটার ১ নম্বর ব্লকে যে বিজেপি কর্মী গুলিবিদ্ধ হন, তাঁর মৃত্যু হয় দিনহাটা হাসপাতালে। মৃতের নাম চিরঞ্জিত কার্জি। বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বুথে ঢুকে তাণ্ডব শুরু করে। বাধা দেওয়ায় বিজেপি কর্মীদের উপর চড়াও হয় তারা। বুথের মধ্যেই গুলি চলে। তৃণমূল কর্মীদের মারে রাধিকা বর্মন নামে তাদের আরও একজন কর্মী জখম হন।
এদিন পূর্ব বর্ধমানে মৃত্যু হয়েছে গুলিবিদ্ধ সিপিএম কর্মী রাজিবুল হকের। আউসগ্রাম-২ নম্বর ব্লকের বিষ্ণুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ নম্বর বুথে তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষে জখম হয়েছিলেন ওই সিপিএম কর্মী। শুক্রবার প্রথমে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। শারীরিক অবস্থার অবনতির হওয়ায় গভীর রাতে এনআরএস হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। এদিন সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর বেলা গড়াতে কাটোয়া মহকুমায় ভোটের বলি হন আরও এক তৃণমূল কর্মী। শনিবার সকাল থেকেই বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর মিলছিল কাটোয়া মহকুমার বিভিন্ন বুথ থেকে। আধাসামরিক বাহিনী পর্যাপ্ত না থাকায় উত্তেজনা দেখা দেয় একাধিক বুথে। কাটোয়া দু’নম্বর ব্লকের নন্দীগ্রামে তৃণমূল এজেন্টে গৌতম রায়ের সঙ্গে বচসা বাঁধে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের। অভিযোগ তখন ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে যান গৌতমবাবু। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
ভোট দিতে গিয়ে নদিয়ার চাপড়ায় খুন এক তৃণমূল কর্মী। নিহতের নাম, হামজার আলি হাসান (৫২)। ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন হামজার। তখনই আচমকা অশান্তি শুরু হয়। তাতেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। তবে বোমা না গুলি, ঠিক কী কারণে মৃ্ত্যু তা এখনও স্পষ্ট নয়।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হল আরও এক তৃণমূল কর্মীর। জানা গিয়েছে, ভোট দিতে এসেছিলেন আনিসুর ওস্তাগর (৪২)। তখনই তাঁকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।