শুভঙ্কর চক্রবর্তী, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ি করিডর বা চিকেন নেকে বড়সড়ো নাশকতার ছক বানচাল। অসম(Assam)-বাংলা সীমানায় ধুবড়ি থেকে দুই শীর্ষ আইএস(ISIS) নেতাকে গ্রেপ্তার করল অসম পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) এবং এনআইএ’র যৌথ দল। এসটিএফের(STF) দেওয়া তথ্য অনুসারে, ধৃত দুই জঙ্গির একজনের নাম হরিস আজমল ফারুকি। তার বাড়ি দেরাদুনের চাকরাটায়। সে ভারতে আইএসের শীর্ষ তিন নেতার একজন। ধৃত অন্য জঙ্গি অনুরাগ সিং ওরফে রেহান, হরিসের ছায়াসঙ্গী। তার বাড়ি পানিপতের দিওয়ানাতে। রেহানের স্ত্রী বাংলাদেশি(Bangladesh)। দুজনই দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় আইএসের নিয়োগ, অর্থ ও অস্ত্র জোগাড় এবং সরবরাহের দায়িত্বে ছিল। দুজনকেই দীর্ঘদিন থেকে খুঁজছিল এনআইএ। তাদের নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক মামলা রয়েছে। অসম পুলিশের এসটিএফের আইজি পার্থসারথি মহন্ত অভিযানের নেতৃত্ব দেন। অসম পুলিশের ডিজি জিপি সিংয়ের বক্তব্য, ‘আপাতত এটুকুই বলতে পারি বড়সড়ো নাশকতার ছক কষা হয়েছিল। আমরা সেটা বানচাল করে দিতে সমর্থ হয়েছি। ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের যোগ আছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’
এসটিএফ সূত্রের খবর, ধৃত দুজন গত চার মাস ধরে বাংলাদেশে ডেরা বেঁধেছিল। গত এক সপ্তাহে তারা দু’বার ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতায়াত করে৷ তিনদিন আগে তারা ভারতে ঢোকে কোচবিহার জেলা দিয়ে। তবে তারা দিনহাটা শহর লাগোয়া বাত্রিগছ দিয়ে ঢুকেছে নাকি মেখলিগঞ্জ সীমান্ত পার করে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। মায়ানমার থেকে আসা অস্ত্র ও বিস্ফোরক নেওয়ার জন্যই তারা ধুবড়িতে গিয়েছিল। সেগুলো নিয়েই শিলিগুড়ি করিডরে নাশকতার ছক কষা হচ্ছিল। ঘটনার পরই অসম ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে এনআইএ এবং এসটিএফ মঙ্গলবার থেকেই বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি শুরু করে। সারারাত নজরদারির পর বুধবার ভোরবেলা সাড়ে চারটে নাগাদ ধুবড়ির ধর্মশালা থেকে দুই জঙ্গিকে হাতেনাতে ধরা হয়। তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু নথি, মোবাইল, সিম কার্ড, অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে। যদিও তদন্তের স্বার্থে সেবিষয়ে এখনই বিস্তারিত কিছু বলতে নারাজ এসটিএফ। ধৃতদের গুয়াহাটিতে এসটিএফের দপ্তরে নিয়ে গিয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী, অাসাম রাইফেলস, বিএসএফের পক্ষ থেকেও ধৃত জঙ্গিদের জেরা করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ১৫ মার্চ মণিপুরের টারো লামখাই এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণ বিস্ফোরক ও অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করে অাসাম রাইফেলস। ১৭ মার্চ উদ্ধার হয় আরও বেশ কিছু অস্ত্র ও বিস্ফোরক। তার কয়েকদিন আগেই চূড়াচন্দ্রপুর থেকে ইনসাস, একে-৪৭, একে-৫৬’এর মতো অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। আইএসের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য মায়ানমার থেকে সেসব ধুবড়িতে আনা হচ্ছিল বলে খবর। আইএসের সহযোগী জঙ্গি সংগঠন অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহের দায়িত্ব নিয়েছিল। অসম থেকে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার হয়ে তিনটি পৃথক রুটে অস্ত্র ও বিস্ফোরক ডুয়ার্সে ও কালিম্পং পাহাড়ের গোপন ডেরায় পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল আইএস।
ধৃত জঙ্গিদের দলে আরও পাঁচ থেকে সাত জন সদস্য থাকতে পারে বলে অনুমান করছেন গোয়েন্দারা। তাদের খোঁজেও তল্লাশি শুরু হয়েছে। ওই সদস্যরা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে পারে আশঙ্কা করেই সীমান্তে হাই অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এদিকে, বিএসএফের বিশেষ দল নজরদারি শুরু করেছে। কোচবিহার, বারবিশা, মেখলিগঞ্জ, জয়গাঁ ও নেপাল সীমান্ত এলাকাতেও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের বিশেষ নজরদারি চলছে।