ভাস্কর শর্মা, ফালাকাটা : যাঁরা পঞ্চায়েত ভোট দেন তাঁরা অবাক হবেনই হবেন। এর আগে তাঁরা পঞ্চায়েত সমিতির কোনও আসনে এত বিপুল সংখ্যক প্রার্থীকে ভোটের লড়াই লড়তে দেখেছেন কি না সন্দেহ। ফালাকাটা পঞ্চায়েত সমিতিতে ১২ নম্বর আসনে এবারে ২৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এতসংখ্যক প্রার্থীকে নিয়ে ব্যালট পেপার কীভাবে তৈরি করা হবে তা নিয়ে নির্বাচন দপ্তর চিন্তায় পড়েছে। চমকের আরও বাকি আছে। এই প্রার্থীদের মধ্যে ২২ জনই নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আবার এই প্রার্থীদের মধ্যে একই পরিবারের সাতজন সদস্য আছেন। চমকপর্বের আরও বাকি। এই ২২ জনই শিক্ষকতার পেশার সঙ্গে যুক্ত। সূত্রের খবর, ভোটের ডিউটি এড়াতেই এঁরা প্রার্থী হয়েছেন। বিষয়টি এই প্রার্থীদের একাংশ স্বীকারও করেছেন।
ফালাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির অন্তত গুরুত্বপূর্ণ আসন ১২ নম্বর আসনটি। এটি জটেশ্বরের মূল এলাকায় পড়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই আসনে যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তাঁদের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস, বিজেপি এবং সিপিএম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া, নির্দল হিসেবে ২২ জন এই আসনে দাঁড়িয়েছেন। এই ২২ জনই শিক্ষক। এই প্রার্থীদের মধ্যে জটেশ্বরে ‘পাল পরিবার’ হিসেবে পরিচিত এক পরিবারের সাতজন রয়েছেন। ঘটনাটি সামনে আসতেই গোটা জেলায় চর্চার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।
কী কারণে ভোটে দাঁড়ানোর এই ঢল? সূত্রের খবর, সরকারি চাকরি করায় এই শিক্ষকদের অবধারিতভাবে ভোটের ডিউটি করতে হত। তা এড়াতেই তাঁরা ভোটে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। নিয়ম অনুযায়ী, কেউ ভোটে দাঁড়ালে স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে আর ভোটের ডিউটি করতে হয় না। এই প্রার্থীদের একজন তো বলেই ফেললেন, ‘পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে চারদিকে যা শুরু হয়েছে তাতে ভোটের ডিউটি করতে রীতিমতো ভয় লাগছে। তার মধ্যে ভোটের ডিউটিতে আমাদের কোনও বিমাও নেই। পরিবারের কথা চিন্তা করেই এবারে ভোটে দাঁড়িয়েছি।’ পাল পরিবারের সদস্যরা অবশ্য সব কিছুকেই ছাপিয়ে গিয়েছেন। বর্ধিষ্ণু এই পরিবারের কমবেশি সবাই শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। পরিবারের সাতজন এবারে এই ভোটে দাঁড়িয়েছেন। ভোটের সময় এই পরিবারে একটি অনুষ্ঠান রয়েছে। সূত্রের খবর, একে তো ভোটের ডিউটি এড়ানোর বিষয়টি আছেই, পাশাপাশি, ওই অনুষ্ঠানে শামিল হওয়ার সুযোগ মিলবে বলেই এই পরিবারের এতজন সদস্য মিলে এবারে ভোটে দাঁড়িয়েছেন।
ভোটের ডিউটি এড়াতে এমনটা করা যায়? ফালাকাটার ব্লক নির্বাচনি আধিকারিক বিডিও সুপ্রতীক মজুমদার বললেন, ‘ভোটের ডিউটি এড়াতেই এই শিক্ষকরা যে প্রার্থী হয়েছেন তা সবার কাছেই স্পষ্ট। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী কারও বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।’ দায়িত্ব হিসেবেই শিক্ষকদের ভোটের ডিউটি করা উচিত বলে নির্বাচনি আধিকারিকের বক্তব্য। তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমরা কাদের দিয়ে ভোট করাব সেটাই চিন্তার বিষয়। ভোটে আমরা কর্মীসংকটের আশঙ্কা করছি।’ শেষটায় তিনি বললেন, ‘সমস্ত সমস্যা সামলেও যাঁরা ভোটের ডিউটি করছেন, তাঁদের কুর্নিশ।’