প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান: ওডিশার বালেশ্বরে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছুঁই ছুঁই। জখম হয়েছেন কমপক্ষে ৯০০ জন। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার ৮ বাসিন্দার। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের নাম ছোট্টু সর্দার (১৮), সফিক কাজি (২৫) ও সাদ্দাম শেখ (৩০)। এছাড়াও এদিন রাত পর্যন্ত জেলার আরও পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। তাঁরা হলেন দেবগ্রামের সফিক শেখ (২৫), কাটোয়ার করুইয়ের সঞ্জয় সর্দার (৪০) ও সৃষ্ট রায় (৩৬), পূর্বস্থলীর নিমদহর বাপি পণ্ডিত ও মঙ্গলকোটের কৈচরের কলেজ সর্দার (২৫)। জখম হয়ে ওডিশার বিভিন্ন হাসপাতালে অনেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অনেকের আবার খোঁজই পাওয়া যায়নি।
মৃতদের মধ্যে ছোট্টু সর্দারের বাড়ি কাটোয়ার করুই গ্রামে। বাবা সুকলাল সর্দারের সঙ্গে কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজে যাচ্ছিলেন ছোট্টু। শনিবার দুপুরে তাঁরা শালিমার স্টেশন থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চাপেন। পথে ওডিশার বালেশ্বরে ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে করমণ্ডল এক্সপ্রেস। দুর্ঘটনায় সুকলাল সর্দার জখম হয়ে চিকিৎসাধীন থাকলেও তাঁর ছেলে ছোট্টু প্রাণ হারান। এদিন সকালে সুকলাল সর্দার বাড়িতে ফোন করে ছেলের মৃত্যুর কথা জানান। ছোট্টুদের সঙ্গে একই ট্রেনে কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া করুই গ্রামের আরও ১০-১৩ জন জখম অবস্থায় ওডিশার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দুর্ঘটনায় মৃত সফিক কাজির বাড়ি বর্ধমান সদর ২ ব্লকের বড়শুল ২ পঞ্চায়েতের কুমিরকোলা গ্রামে। কাটোয়ার বরমপুরের নুর মহম্মদ মল্লিকের সঙ্গে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চেপে চেন্নাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজে যাচ্ছিলেন সফিক। বালেশ্বরে ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়লে সফিকের আর কোনও খোঁজ পাননি নুর। বিষয়টি সফিকের বাড়িতে ফোন করে জানান তিনি। সফিকের ফোনে রিং হলেও তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে রাত ১২টা নাগাদ এক ব্যক্তি ফোন ধরে নিজেকে জিআরপি স্টাফ বলে পরিচয় দিয়ে বলেন, সফিক হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এদিন সকালে সফিকের পরিবারের লোকজন সেই হাসপাতালে পৌঁছে সেখানে সফিককে মৃত অবস্থায় দেখেন। ওই যুবকের বাড়িতে স্ত্রী, চার বছরের সন্তান ও বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনশীল ছেলের মৃত্যুতে অথৈ জলে পড়ে গেল পরিবারটি।
এছাড়া দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে সাদ্দাম শেখ নামে মঙ্গলকোট বিধানসভার গিধগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের মালপাড়ার বাসিন্দা অপর যুবকের। শ্রমিকের কাজে যোগ দিতে সাদ্দাম কেরলে যাচ্ছিলেন। বাড়িতে সাদ্দামের বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং দু’মাসের একটি সন্তান রয়েছে।
জেলাশাসক প্রিয়াংকা সিংলা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ট্রেন দুর্ঘটনায় জেলার তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা সবাই করমণ্ডল এক্সপ্রেসের যাত্রী। দুর্ঘটনাগ্রস্তদের মধ্যে মন্তেশ্বর, মঙ্গলকোট ও মেমারির বাসিন্দারাও রয়েছেন। রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘বিস্তারিত খোঁজ খবর নিচ্ছি। দুর্ঘটনাগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে রয়েছে আমাদের সরকার।’