প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের প্রধান ও বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে দেশের মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ক্ষোভে ফুঁসছে দেশ। ইতিমধ্যেই ব্রিজভূষণ সিংয়ের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনকারী কুস্তিগিরদের সমর্থন জানিয়েছে দেশের ঐক্যবদ্ধ কৃষক মহল। যৌন হেনস্তার ইস্যুতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ওপরে চাপ আরও বাড়িয়ে এদিন এই বিতর্কিত বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে দ্রুত আলোচনা ও দোষী সাব্যস্ত হলে অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাল তৃণমূল।
তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সুস্মিতা দেব, এই মর্মে শিক্ষা, মহিলা ও শিশুকল্যাণ, যুব এবং ক্রীড়া মন্ত্রক বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বিবেক ঠাকুরকে একটি চিঠি প্রেরণ করে বলেন, যে সরকার ‘বেটি বাঁচাও’ নীতির কথা বলে থাকে, সেই কেন্দ্রীয় শাসক দলের প্রতিনিধির বিরুদ্ধে যখন দেশের কৃতি মহিলা ক্রীড়াবিদদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে, তখন তা গোটা সমাজের কাছেই একটি জ্বলন্ত প্রশ্নচিহ্ন স্বরূপ। সরকারের দায়িত্ব, সমাজের সর্বস্তরের মহিলাদের সুষম নিরাপত্তা প্রদান করা, তা ঘরে চার দেয়ালের ভিতর হোক বা ‘কর্মক্ষেত্র’এ। সুস্মিতা জানিয়েছেন, এই ঘটনা দেশের ক্রীড়াজগতকে কালিমালিপ্তই শুধু করেনি, ক্রীড়াজগতের সঙ্গে জড়িত মহিলাদের অংশগ্রহণ এবং সুরক্ষা নিয়েও বড়সড়ো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক পরিসরে ভারতের গৌরব ধূলিসাৎ করেছে৷ তৃণমূল সাংসদ এও দাবি করেছেন, মহিলা কুস্তিগিরদের সঙ্গে যা হয়েছে, তা ভারতীয় আইনে একটি সংবেদনশীল ঘটনা, যা আইনত দণ্ডনীয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে অভিযুক্ত বিজেপি সাংসদের ক্ষেত্রে কোনও পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি।
সুস্মিতা মনে করিয়ে দেন, এই ভারতীয় কৃতি মহিলা কুস্তিগিররা ‘কর্মক্ষেত্রে’ যৌন হয়রানির শিকার। অতীতে ২০১৮ সালে ‘মিটু’ আন্দোলন শুরু হলে, গোটা দেশ উত্তেজনায়, ক্ষোভে, প্রতিবাদে ফেটে পড়ে, যার তপ্ত আঁচ পড়েছিল দিল্লির রাজনৈতিক মহলেও। সে সময় পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় সরকার একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেন যেখানে ছিলেন রাজনাথ সিং, নীতিন গড়করি, নির্মলা সীতারমন ও মানেকা গান্ধীর মতো তৎকালীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শীর্ষ এবং প্রভাবশালী শাসক দলীয় প্রতিনিধিরা, যারা তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি নিয়ে মধ্যস্থতার রাস্তা বের করেন। এহেন প্রসঙ্গেই সুস্মিতার দাবি, যন্তর মন্তরে নিরবিচ্ছিন্ন আন্দোলনে বসা কুস্তিগিরদের ইস্যুকেও একইরকম গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তা নিয়ে পূঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা ও প্রয়োজনে কুস্তি ফেডারেশনের প্রধান ব্রিজভূষণ সিংকে কমিটির বৈঠকে তলব করা হোক এবং সর্বোপরি দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুততার সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিপ্রণয়ণের আর্জি জানিয়েছেন সুস্মিতা।
প্রসঙ্গত, ব্রিজভূষণের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামা কুস্তিগিরদের নিয়ে প্রথম থেকেই প্রশ্নের মুখে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। কুস্তিগিরদের অভিযোগ সত্ত্বেও কেন যৌন হেনস্তার মতো গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত ব্রিজভূষণকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না বা পদ থেকে সরানো হচ্ছে না, তা নিয়ে কুস্তিগিরদের মতো প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরাও। আজ কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়িয়ে সেই প্রশ্ন উস্কে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কোর্টে বল ঠেলে দিল ঘাসফুল শিবির। এ নিয়ে আদৌ কোনও পদক্ষেপ নেয় কিনা শিক্ষা, মহিলা ও শিশুকল্যাণ, যুব এবং ক্রীড়া মন্ত্রক বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি, সেটাই দেখার বিষয়।