প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: মণিপুর ইস্যুতে সর্বসমক্ষে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং প্রয়োজনে পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারত সরকারকে সবরকমের সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে বিতর্ক উস্কে ছিলেন দিল্লিস্থিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটি। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই এবার মণিপুরে জাতিগত হিংসার ইস্যুতে সরব হল ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্ট৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংসদে এদিন জরুরি ভিত্তিতে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, একইসাথে মণিপুরে জাতিগত হিংসায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হত্যা তথা কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীন ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করা হয়, যা নিয়ে তুমুল অস্বস্তিতে পড়ে সরকারপক্ষ। ভারতের তরফে তা থামানোর চেষ্টা করা হয় তথা ভারতের বিদেশ মন্ত্রক তরফে ‘আলোচ্য বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে আলোচনা বন্ধ করার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। যদিও তাতে গুরুত্ব দেয়নি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পার্লামেন্ট।
১৪ জুলাই ফ্রান্সে বাস্তিল দিবস অনুষ্ঠানে ফরাসি সরকারের প্রধান অতিথি হিসাবে তাতে যোগ দিতে চলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আজ, বৃহস্পতিবার প্যারিসে পৌঁছেছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রী মোদী প্যারিসে পা রাখার আগেই ফ্রান্সের স্ট্রসবার্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংসদের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন চলাকালীন স্পেন ও ভেনেজুয়েলার মতো রাষ্ট্রে মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন লঙ্ঘনের নানারকম মামলা গুলির মধ্যে মণিপুরের জাতিগত সংঘর্ষের বিষয়টি সংসদের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারতকে মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ স্থাপন করার আহ্বান জানিয়েছে। অগ্নিগর্ভ মণিপুরে অস্বাভাবিক হিংসা, জীবনহানি এবং সম্পত্তির ধ্বংসের নিন্দা করে ইইউ পার্লামেন্ট সর্বসম্মতভাবে প্রস্তাবিত রেজুলেশনে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃস্থানীয় সদস্যদের জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কঠোর ভাষায় নিন্দা করেছে। যদিও ভারত সরকার এই বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে পরিস্থিতি সামলাতে চেয়েছিল। তা সত্ত্বেও ইইউ পার্লামেন্ট দেশের পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, ‘সংখ্যালঘু, সুশীল সমাজ, মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকরা নিয়মিত হয়রানির সম্মুখীন, বিশেষ করে নারীরা যৌন সহিংসতা এবং হয়রানিসহ উপজাতীয় এবং ধর্মীয় পটভূমির সাথে সম্পর্কিত অধিকার নিয়ে গুরুতর লঙ্ঘনের সম্মুখীন।’
ইইউ পার্লামেন্টের রেজুলেশনে এও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালের অক্টোবরে, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার মানবাধিকার কর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য ভারতের কাছে আবেদন করেছিলেন, নাগরিক সমাজের পরিস্থিতি দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। সেইসঙ্গে বিজেপির ‘জাতিগত বিভক্ত নীতির’ সমালোচনা করেছিলেন। এবার মণিপুর ইস্যুতে ফের আবারও মোদী সরকারের সমালোচনায় সরব হল ইউরোপীয় সংসদ৷ পাশাপাশি মণিপুরে যারা ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের প্রতি মানবিক সাহায্যের অনুমতি দেওয়ার জন্য এবং স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের দ্বারা তদন্ত করার জন্য ভারত ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইইউ পার্লামেন্ট। রাজনৈতিক নেতাদের বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার জন্য উস্কানিমূলক বক্তব্য বন্ধ করারও আবেদন জানানো হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংসদের এই ভূমিকার প্রসঙ্গে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘মণিপুর অবশ্যই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কেন্দ্রীয় সরকারই এর ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এও সত্যি অগ্নিগর্ভ মণিপুরে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফেরাতে মোদী সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ। একইসাথে মণিপুর নিয়ে যে রকম উদাসীনতা, উপেক্ষার নজির রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকার তা বিস্ময়কর। এই অবজ্ঞার নজিরই প্রতিফলিত হচ্ছে ইউরোপীয় সংসদের ভূমিকায়।’