প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত, নয়াদিল্লি: যাবতীয় জল্পনার অবসান৷ আসন্ন বাদল অধিবেশনেই মোদী সরকার সংসদে পেশ করতে চলেছে দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিল (দ্য গভর্মেন্ট অফ ন্যাশনাল ক্যাপিটাল টেরিটরি অফ দিল্লি বিল [সংশোধনী] ২০২৩)।
বৃহস্পতিবার লোকসভা সচিবালয়ের তরফে প্রকাশিত বিশেষ বুলেটিন বার্তায় আসন্ন বাদল অধিবেশনে আলোচনা এবং অনুমোদনের জন্য পেশ হতে চলা প্রায় দু ডজন বিলের সূচী প্রকাশ্যে আনা হয়৷ এই তালিকার শীর্ষে ঠাঁই পেয়েছে দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিল৷ সর্বভারতীয় রাজনৈতিক মহলে, এ যাবত জল্পনা ছিল দিল্লি সরকারের অধীনে কর্মরত আমলাদের উপরে সায়ত্তশাসন কায়েম করার উদ্দেশে তৈরি এই বিলটিকে হয়ত শেষ পর্যন্ত বাদল অধিবেশনে নাও আনতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার৷ কিন্তু এদিন সে সব জল্পনা অলীক প্রতিপন্ন হয়েছে৷ এদিন লোকসভা সচিবালয় সূত্রে সরকারি ঘোষণায় জানিয়ে দেওয়া হল বাদল অধিবেশনেই পেশ করা হবে বিতর্কিত দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিল৷
প্রসঙ্গত, দিল্লি সরকারের ক্ষমতা খর্ব করে কর্মরত আইএএস-র নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখার জন্য তৈরি এই দিল্লি অর্ডিন্যান্সকে কেন্দ্র করে সরকার বনাম বিরোধীদের মতপার্থক্য ইতিমধ্যেই তুঙ্গে উঠেছে৷ দিল্লির শাসনক্ষমতা যাদের হাতে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি ইতিমধ্যেই এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করেছে৷ আপ-র পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, আরজেডি, সপা, বাম সহ বিরোধী শিবিরের অধিকাংশ দল৷ এই তালিকায় এখনও পর্যন্ত নেই কংগ্রেস৷ সরকারিভাবে এই ইস্যুতে দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করেনি তারা৷ কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্তহীনতা বিরোধী ঐক্যে প্রশ্ন তুলেছে যেখানে শতাব্দী প্রাচীন দলটির সঙ্গে তীব্র মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল৷
জুন মাসের শেষার্ধে পাটনার বিরোধী বৈঠকে এই মতবিরোধ প্রথম সামনে আসে৷ তারপর যত দিন এগিয়েছে ততই বেড়েছে এই মতপার্থক্য যেখানে বারবার বলা সত্বেও কংগ্রেস এখনও এই বিল নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানায়নি৷ আগামী সপ্তাহেই ব্যাঙ্গালুরুতে দ্বিতীয় দফা বিরোধী বৈঠক৷ সেখানে যোগদান করা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেছে আম আদমি পার্টি৷ তাদের যুক্তি হল, বিজেপি বিরোধিতায় নেমে দিল্লি অর্ডিন্যান্স ইস্যুতে কংগ্রেস যদি নিজ অবস্থান স্পষ্ট না করে তাহলে তারাও ব্যাঙ্গালুরুর বৈঠকে যোগদান করা নিয়ে ভাবতে বাধ্য হবে৷ এই আবহেই বৃহষ্পতিবার লোকসভার সচিবালয় জানিয়ে দিয়েছে বাদল অধিবেশনেই সংসদে পেশ করা হবে দিল্লি অর্ডিন্যান্স বিল৷
সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারির কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃহষ্পতিবার ‘আপ’-এর কেন্দ্রীয় নেতা সঞ্জয় বসু জানান, ‘এটা তো জানাই ছিল। সরকার যে এই বিল সংসদে পেশ করবে তার আঁচ আমরা আগেই পেয়েছি৷ আমরা এতে শঙ্কিত নই। বিলটি এই মুহূর্তে শীর্ষ আদালতে বিচারাধীন, ১৭ জুলাই তার শুনানি নির্ধারিত। আদালতের পর্যবেক্ষণ মূল্যায়ন করেই আমরা অগ্রসর হবো।’ সঞ্জয় বসু এও জানান, ‘বহু দল এ নিয়ে আমাদের সমর্থন দিয়েছেন, আমরা কৃতজ্ঞ। বহু দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কেউ পাশে থাকুক না থাকুক, আমরা আমাদের অধিকারের লড়াই লড়ব।’
এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসের লোকসভা দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘কংগ্রেস যে কোনো অগণতান্ত্রিক বা অসংসদীয় নীতির বিরুদ্ধে বরাবর সোচ্চার হয়েছে। ১৫ জুলাই কংগ্রেসের স্ট্র্যাটেজিক কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে ফয়সালা হতে পারে। যারা এ নিয়ে অহেতুক লম্ফঝম্প করছেন তারা ধৈর্য ধরুন, যথাসময়ে কংগ্রেস তার অবস্থান স্পষ্ট করবে।’ কংগ্রেস আরেক সাংসদ মণিকম টেগোর জানান, ‘লোকসভার বুলেটিন দেখেছি৷ এই নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি৷ ধৈর্য্য ধরুন, আমাদের হাইকমান্ড যথাসময়ে তাদের মত জানাবে৷’ তৃণমূলের তরফে রাজ্যসভার সাংসদ দোলা সেন বলেন, ‘দিল্লি অর্ডিন্যান্স ইস্যুতে আমাদের দলের নীতি পরিস্কার৷ অরবিন্দজি নিজে কলকাতায় এসে আমাদের দলনেত্রী, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে সমর্থন চেয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী তাকে আশ্বস্ত করেছেন৷ এই ইস্যুতে আমরা আপ-র পাশে ছিলাম, আছি, থাকবো৷’