নকশালবাড়িঃ চা বাগান এলাকায় ছেলে মেয়েদের কাছে সব থেকে জনপ্রিয় খেলা হল ফুটবল। কিন্তু নকশালবাড়ি চা বাগানের ছেলেমেয়েরা এমন একটি খেলা বেছে নিয়েছে, যা এদেশে হাতেগোনা কয়েকজন খেলেন। সেই খেলাটির নাম হয়তো অনেকেই শোনেননি। খেলাটি হল ইকুয়েস্ট্রিয়ান। ঘোড়ায় চেপেই খেলতে হয় এই খেলা। ঘোড়ায় চড়ে এই খেলায় আভিজাত্যের ছোঁয়া থাকলেও নকশালবাড়ি চা বাগানের শ্রমিক পরিবারের ছেলেরাই প্রশিক্ষণ নিচ্ছে ইকুয়েস্ট্রিয়ানের। তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন দেশের বিখ্যাত ইকুয়েস্ট্রিয়ান খেলোয়াড় অলিম্পিয়াড তথা এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ জয়ী ইমতিয়াজ আনিস।
নকশালবাড়ি চাবাগানে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ইকুয়েস্ট্রিয়ান। চা বাগানের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় এই খেলা হতে পারে তা কখনও স্বপ্নেও ভাবেনি কেউ। সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করলেন নকশালবাড়ি চাবাগানের ডিরেক্টর সোনিয়া জাব্বার। জানা গিয়েছে, সোনিয়ার উদ্যোগে গত বছরের জুলাই মাস থেকে বাগানের একটি ৫০ বিঘা ফাঁকা জমির ওপর গড়ে উঠেছে ইকুয়েস্ট্রিয়ান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। আপাতত বাগানের ৫ জন ছেলেকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হছে। এদের প্রত্যেকের বয়স ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। সম্পূর্ণ বিনে পয়সায় প্রশিক্ষন দিচ্ছে চা বাগান কর্তৃপক্ষ। প্রশিক্ষন নিচ্ছে বাগানের বাসিন্দা জীবন ওড়াও, কার্তিক গোয়ালা, সাকি ওড়াও, বিক্কি মালপাহাড়িয়া, রোশন লোহার। এদের কাছে একসময় ঘোড়ার পিঠে চেপে দৌড়ানো ছিল স্বপ্নের মতো। সাধারণত টিভিতেই ঘোড়ার এই খেলা দেখতেন তারা। এখন নিজেরাই ঘোড়ায় চেপে ছুটছে তারা।
নকশালবাড়ি চা বাগানের ডিরেক্টর সোনিয়া জাব্বার বলেন, বর্তমান প্রজন্ম অনেকেই আগ্রহ হারাতে বসেছে খেলাধুলো থেকে। তরুণপ্রজন্ম ব্যস্ত স্মার্টফোন ইন্টারনেটে। ভারত তথা গোটা বিশ্বে ইকুয়েস্ট্রিয়ান সাধারণ ধনীদের খেলা বলেই পরিচিত। সেই মিথ ভেঙে শ্রমিক পরিবারের ছেলেদের এই খেলা শেখানোর ব্যবস্থা করেছি। বাগানে ১৯টি ঘোড়া থাকলেও আপাতত ৫ টি ঘোড়া দিয়েই অনুশীলন করছে বাগানের ছেলেরা। আমাদের লক্ষ্য আগামী ৫ বছরের মধ্যে বাগানের ছেলেমেয়েদের আন্তর্জাতিকস্তরে অশ্বচালনার খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করানো। আপাতত বাগানের ছেলেদের ইকুয়েস্ট্রিয়ানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও অদূর ভবিষ্যতে বাইরের ছেলেমেদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হবে বানিজ্যিক ভাবেই।
এদিকে বাগানের ছেলেদের ইকুয়েস্ট্রিয়ানের প্রশিক্ষণ দিতে অস্ট্রেলিয়া থেকে নকশালবাড়ি চা বাগানে এসেছেন ভারত বিখ্যাত ইকুয়েস্ট্রিয়ান খেলোয়াড় ইমতিয়াজ আনিস। ইমতিয়াজ ২০০ সালে সিডনি অলিম্পিকে অশ্বারোহীতে অংশ নিয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে তিনি এশিয়ান গেমসে অশ্বারোহীতে ব্রোঞ্জ পদক জয় করেছিলেন। ইমতিয়াজ বলেন, ‘প্রথম ভারতীয় হিসেবে আমি একমাত্র ইকুয়েস্ট্রিয়ানে অংশগ্রহন করেছিলাম। গত ২০ বছরে আর কোনও খেলোয়াড় তৈরি হয়নি ভারতে। এই খেলার জন্য প্রচুর পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। বাচ্চাদের কম বয়স থেকে সঠিক প্রশিক্ষণ দিলে এই খেলায় দক্ষ হয়ে উঠবে।’
চাবাগানের শ্রমিক মুন্না গোয়ালা বলেন, ‘মালিকের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। ছেলে নকশালবাড়ি নন্দপ্রসাদ স্কুলে দশম শ্রেণীতে পড়ে ছেড়ে দিয়েছে। তাই এই প্রশিক্ষন কেন্দ্রে ঢুকিয়ে দিয়েছি। আগামীদিনে ছেলে এইও খেলায় ভালো জায়গায় গেলে আমাদের নাম হবে।’