আলিপুরদুয়ারঃ আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের বক্সা পাহাড়ের আদমা গ্রামের সত্তর বয়সী বাসিন্দা ছেনদা ডুকপা কয়েকদিন আগেই শ্বাস কষ্টের সমস্যা নিয়ে লতাবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের ভর্তি হয়েছিলেন। শনিবার হাসপাতাল থেকে ছুটি হলে তাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনতে কালঘাম ছুটে যায় পরিবারের লোকেদের। তার অন্যতম কারণ আদমা যাওয়ার পথে বেহাল রাস্তা। এই দুর্গম পথে একা যাতায়াত করাই ঝুঁকির। সেই দুর্গম পথ ধরেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্ট্রেচারে করে অসুস্থ বৃদ্ধাকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন থিলে দর্জি ডুকপা, দর্জি গ্যাসি ডুকপারা। এই দৃশ্যই প্রমাণ করে রাজ্য থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন আদমা গ্রাম।
আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের বক্সা পাহাড়ের আদমা গ্রাম কার্যত বিচ্ছিন্ন। রাজ্যের অন্তর্গত হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই বেহাল। দুর্গম পাহাড়ি পথে গ্রামবাসীদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে জীবন জীবিকার জন্য শহরে আসতে হয় সেই গ্রামের বাসিন্দাদের। গ্রামে যাওয়ার একমাত্র দুর্গম বেহাল রাস্তা সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের।ওই বেহাল রাস্তা দ্রুত সংস্কারের দাবি উঠছে ওই গ্রাম থেকে। বিষয়টি নজরে এসেছে প্রশাসনেরও। রাস্তা সংস্কারের বিষয়ে কালচিনির বিডিও প্রশান্ত বর্মনের বক্তব্য,’ ওই রাস্তার বিষয়টি নজরে এসেছে। ওই জায়গায় কাজ করতে হলে বন বিভাগের অনুমতি প্রয়োজন। বনদপ্তরে বিষয়টি জানানো হয়েছে। অনুমতি পাওয়া গেলেই ওই জায়গাটা সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে।’
তবে এইভাবে কতদিন চলতে হবে সেই প্রশ্ন তুলেছেন আদমা গ্রামের অনেকেই। দর্জি গ্যাসি ডুকপা নামে ওই গ্রামের এক বাসিন্দার কথায়,’ জুন মাস থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তো বর্ষার জন্য রাস্তা খারাপ থাকে পাহাড়ে। নতুন করে ধস নেমে যে রাস্তা আরও ভেঙেছে। বাজার করা, হাসপাতালে যাওয়া সব কিছুতেই মুশকিল’।
বক্সা পাহাড়ের বেহাল রাস্তার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। রাস্তা সংস্কারের দাবি বক্সা পাহাড় থেকে উঠে এসেছে বারবার। সম্প্রতি পোখরি থেকে আদমা যাওয়ার রাস্তায় ধস নামায় সমস্যা আরও বেড়েছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন কয়েক জায়গায় এমনভাবে ধস নেমেছে যে ঠিক করে হাঁটাও যাচ্ছে না। বন্দি হয়ে থাকছেন আদমা সহ পার্শ্ববর্তী এলাকার আরও কিছু ছোট গ্রামের প্রায় ১ হাজার বাসিন্দা। যদিও আদমা থেকে চুনাভাটি হয়ে বক্সা ফোর্টে আসার আরেকটি রাস্তা রয়েছে। যেটা দিয়ে অনেকটা ঘুরে যাতায়াত করতে হয় ওই এলাকার বাসিন্দাদের। আর সেখানে থেকে নিচে আসা যায়। তবে বক্সা পাহাড়ের আদমার বেশিরভাগ মানুষই পাহাড় থেকে নিচে নামে পোখরির রাস্তা ধরেই। কেননা পোখরি থেকে গাড়ি করে নিচে নামা যায়। গাড়ি যাওয়ার রাস্তা রয়েছে পোখরি পর্যন্তই।
স্বাভাবিক ভাবেই ওই রাস্তায় ধস নামায় চিন্তা বাড়ছে আদমাবাসীদের মধ্যে। আদমা গ্রাম থেকেই আবার রাজাভাতখাওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানও নির্বাচিত হয়েছেন। গ্রামের রাস্তা বেহাল হওয়াও চিন্তায় রয়েছেন নতুন প্রধান সোনম জ্যাংমো ডুকপাও। এদিন উনি বলন, ‘পাহাড়ের রাস্তা সংস্কারের বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে সেটা আগেই ঠিক করেছিলাম। তবে ওই জায়গায় ধসের জন্য যে ক্ষতি হয়েছে সেটা গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে সংস্কার করা যাবে না। এখন এত ফান্ড নেই। সেজন্য বিষয়টি বিডিওকে জানানো হয়েছে।’