মুর্শিদাবাদ: এগরায় বিস্ফোরণের রেশ এখনও কাটেনি। ফের বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল রঘুনাথগঞ্জ। বোমা ফেটে জখম হলেন তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের ছেলে ও নাতি। বাড়ির ছাদে বোমা ফাটে। তাতে জখম হন, কবীর শেখ (১৭) এবং সামাদ শেখ (৪)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রঘুনাথগঞ্জ থানার কাশিয়াডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের গঙ্গাপ্রসাদ-আবুপাড়া গ্রামে পঞ্চায়েত সদস্য লাইলি বিবির বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। তাঁর বাড়ি থেকে বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায়। অভিযোগ, বাড়ির ছাদ লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। কিন্তু স্থানীয়রা জানান, বাড়ির ছাদে বোমা তৈরি করে শুকোতে দেওয়া হচ্ছিল। আচমকাই বিস্ফোরণ হয়। এদিন বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে এলাকা। ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, তাঁদের বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে জখমদের আর খোঁজ মিলছে না।
কাশিয়াডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান ফাতেমা বিবি বলেন,’ আমি এরকম একটি ঘটনার কথা শুনেছি। তবে বিস্তারিত কিছু আমার জানা নেই। ‘ এই বিষয়ে রঘুনাথগঞ্জ বিধানসভার বিধায়ক তথা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখরুজামান বলেন,এলাকাতে একটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার কথা শুনেছি। প্রশাসনকে বলা হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে। এই প্রসঙ্গে জঙ্গিপুর মহকুমা কংগ্রেস সভাপতি হাসানুরজামান বলেন, সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচন। গোটা রাজ্যজুড়েই শাসক দল সন্ত্রাস চালাচ্ছে। এলাকাতে বোমা রেখে সাধারণ মানুষকে এখন থেকে ভয় দেখাচ্ছে তারা। এই বিষয়ে জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার পি ভি সতীশ জানিয়েছেন, দুপুর একটা নাগাদ একটি বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনার খবর পান। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি, পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার খাদিকুল এলাকায় একটি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে গ্রামের রাস্তায় ছিন্নভিন্ন হয়ে দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিস্ফোরণে অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়। জখম হন বেশ কয়েকজন। কী করে এমন ঘটনা ঘটল, তা জানতে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি, এই ঘটনায় এগরা থানার আইসিকে শোকজ করতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিযুক্ত ভানু কীভাবে জামিন পেলেন, তা জানতে চান তিনি। এরপরই আইসিকে শোকজ করা হয়।
অপরদিকে, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আগে থেকেই ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। মঙ্গলবার থেকেই এলাকায় চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছিল পুলিশ। এই ঘটনায় এনআইএ তদন্তের দাবি করেন শুভেন্দু। গতকাল বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শনে যান তিনি। বিজেপির তরফে পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিষয়টি লঘু করে দেখানোর অভিযোগ তোলা হলেও তৃণমূলের পালটা দাবি, বিস্ফোরণের তথ্যপ্রমাণ সহ ফরেন্সিক রিপোর্ট আসার আগে বিস্ফোরক আইনের ধারা দিলে মামলা দুর্বল হয়ে যাওয়ারই আশঙ্কা থাকে।
এদিন বিস্ফোরণকাণ্ডে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চায় কলকাতা হাইকোর্ট। ঘটনার ভয়াবহতার ছবি দেখে শিউরে ওঠেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। পাশাপাশি আদালতের পর্যবেক্ষণ, বিস্ফোরণের যা ‘ভয়াবহতা’, তাতে বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। সিআইডি এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে। বিস্ফোরক আইনে মামলা হলে আইন মেনে তদন্ত করতে পারবে এনআইএ-ও। শুভেন্দু অধিকারীর করা একটি জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে আদালত বৃহস্পতিবার একথা জানায়। এদিকে এগরার ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের বিস্ফোরণের ঘটনায় শোরগোল পড়েছে রাজ্যজুড়ে।