নাগরাকাটা: লকডাউনে বোঝা গিয়েছিল গোটা দেশের পরিযায়ী শ্রমিকদের যন্ত্রণার কথা। এরাজ্য থেকেও প্রচুর শ্রমিকের রুটি রুজির সন্ধানে দলে দলে ভিনরাজ্যে পাড়ি জমানোর বিষয়টি নতুন কিছু নয়। এবারে সেই পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য কল্যাণকর প্রকল্প চালু করল রাজ্য সরকার। যার নাম দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইগ্রান্ট ওয়ার্কাস ওয়েলফেয়ার স্কীম-২০২৩। ইতিমধ্যেই নয়া প্রকল্পটির কথা শ্রম দপ্তরের তরফে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি ওই প্রকল্পের দেখভাল, গোটা দেশে ছড়িয়ে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান ও সহায়তা সহ তাঁদের ওপর নজর রেখে চলার জন্য একটি ১০ সদস্যের ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কাস ওয়েলফেয়ার বোর্ডও গঠন করে দেওয়া হয়েছে। যাতে চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন শ্রম মন্ত্রী মলয় ঘটক। সদস্য সম্পাদকের (মেম্বার সেক্রেটারি) দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্যের শ্রম কমিশনার। উত্তরবঙ্গের কোচবিহার পুরসভার কাউন্সিলার অভিজিত দে ভৌমিক বোর্ডের সদস্য হিসেবে রয়েছেন। শ্রম দপ্তরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি বরুণ রায় বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের কল্যাণে চালু হওয়া প্রকল্পটি একদম নতুন। এতে ওই শ্রমিকরা নানাভাবে উপকৃত হবে।
রাজ্যের তরফে যে নয়া কল্যাণকর প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে তার সুবিধা পেতে পরিযায়ী শ্রমিকদের পোর্টাল বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিজেদের রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে। দিতে হবে আধার তথ্য, নমিনির নাম ও কর্মস্থলের বিবরণ। রেজিস্ট্রেশনের কাজটি হয়ে গেলে পরিযায়ী শ্রমিক পিছু আইডেন্টিফিকেশন নম্বর তৈরি হবে (এমডব্লিইউআইএন)। ফি বছর রেজিস্ট্রেশন পুনর্নবীকরণ করতে হবে। যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা তাঁদের মিলবে সেগুলির মধ্যে অন্যতম স্বাভাবিক মৃত্যু হলে ৫০ হাজার ও দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুতে ২ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ পাবে তাঁর নমিনি। ভিনরাজ্যে কোনও রেজিস্টার্ড পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হলে বাড়িতে দেহ নিয়ে আসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনে এককালীন ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহযোগিতার সংস্থানও রয়েছে নয়া প্রকল্পে। বাইরের কর্মস্থলে মৃত্যুর পর সেখানেই দেহ সৎকারের জন্য ৩ হাজার টাকা সহযোগিতার ব্যবস্থা রয়েছে। কাজের সময় রেজিস্টার্ড পরিযায়ী শ্রমিক দুর্ঘটনাজনিত কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হলে ৫০ হাজার (৪০ থেকে ৮০ শতাংশ বৈকল্য) ও ১ লক্ষ টাকা (৮০ শতাংশের বেশি) আর্থিক সহযোগিতার কথাও আছে প্রকল্পটিতে। তবে প্রতিবন্ধকতার বিষয়টির ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতালের সংশাপত্র প্রয়োজন। প্রয়োজনে মাইগ্রান্ট ওয়ার্কাস ওয়েলফেয়ার বোর্ড পরিযায়ী শ্রমিকদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণেরও আয়োজন করবে। সহকারী শ্রম কমিশনারদের ওপর এই প্রকল্পটির প্রশাসনিক দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
নানা মহল থেকে প্রায়ই অভিযোগ উঠে আসে এরাজ্য থেকে ঠিক কত সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে গিয়েছেন তার কোনও তথ্য রাজ্যের কাছে নেই। এবারে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ওই পূর্ণাঙ্গ তথ্য উঠে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর শ্রম দপ্তর একটি ডেটা বেসও তৈরি করতে পারবে। ডুয়ার্সের চা বলয় সহ গোটা উত্তরবঙ্গ থেকে বহু পরিযায়ী শ্রমিক রুটি রুজির সন্ধানে বাইরে যান। তাঁরাও প্রকল্পটির মাধ্যমে উপকৃত হতে পারবেন।