শিবশংকর সূত্রধর, বাণেশ্বর: কোচবিহার-২ ব্লকের বাণেশ্বরের পাশে বোকালিরমঠে কালী মন্দির তৈরির জন্য জমি খুঁড়তে গিয়ে প্রাচীন নিদর্শনের হদিস মিলেছে। মাটির নীচে প্রাচীন ইট দিয়ে তৈরি দেওয়ালের খোঁজ মেলায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের কয়েকজন ইতিহাস গবেষক জায়গাটি পরিদর্শন করেন। নির্মাণশৈলী দেখে তাঁদের দাবি, দেওয়ালটি ১৩০০-১৪০০ বছরের পুরোনো। তবে সঠিক তথ্য উদ্ধার ও জায়গাটি সংরক্ষণের জন্য ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই)–এর কাছে আবেদন করা হয়েছে। কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপজ্যোতি মজুমদারের দাবি, ‘হিমালয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা তথা ডুয়ার্সজুড়ে এরকম বহু ইতিহাস রয়েছে। বোকালিরমঠে যে নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে সেটির যথোপযুক্ত সংরক্ষণ প্রয়োজন।’
স্থানীয় সূত্রে খবর, বোকালিরমঠে একটি প্রাচীন রাস্তার অংশ রয়েছে। তার পাশেই বহু বছর ধরে একটি কালী মন্দির রয়েছে। মন্দিরটি পাকা করে তৈরি করা হবে বলে সম্প্রতি মন্দির কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়। সেজন্য সেখানে গর্ত খোঁড়া হয়। আর্থমুভার দিয়ে গর্ত খোঁড়ার সময় মাটির নীচে প্রাচীন ইটের দেওয়াল দেখা যায়। যার কিছু অংশ ভেঙেও গিয়েছে। মাটির নীচের ইটগুলি এখনকার ইটের তুলনায় আকারে অনেকটাই বড়। অনেকটা বর্গক্ষেত্রের আকারের। আপাতত নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। খবর পেয়ে কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের ইতিহাস বিষয়ক গবেষক ও ইতিহাসের অধ্যাপকরা ওই জায়গা পরিদর্শন করেন। তাঁদের দাবি, দেওয়ালটি কোচবিহারের রাজ আমলের থেকেও প্রাচীন।
গবেষক শৈলেন দেবনাথের কথায়, ‘ইটগুলির গঠনশৈলী দেখে মনে করা হচ্ছে সেগুলি ১৩০০-১৪০০ বছরের পুরোনো। চিলাপাতার গড় ও আলিপুরদুয়ারের মজিদখানাতেও এরকম স্থাপত্য মিলেছিল।’ ইতিহাসের শিক্ষক কৌশিক চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘এখানে যদি কোনও নির্মাণকাজ করা হয় তাহলে ইতিহাস নষ্ট হয়ে যাবে।’ স্থানীয় বাসিন্দা তথা ইতিহাসের অধ্যাপক ডঃ উৎপল রায় বললেন, ‘বোকালিরমঠের সঙ্গে বহু ইতিহাস জড়িয়ে। এগুলি সংরক্ষণের জন্য এএসআইয়ের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা নিক।’
প্রায় ৪০ বছর আগে এখানে প্রাচীন ইটের তৈরি সিঁড়ি পাওয়া গিয়েছিল বলে প্রবীণ বাসিন্দা ফণীভূষণ রায়ের দাবি, ‘কয়েক পুরুষ আগে থেকে এখানে কালীপুজো হয়। প্রায় ৪০ বছর আগে একবার মাটি খুঁড়তে গিয়ে পুরোনো ইটের তৈরি সিঁড়ি পাওয়া গিয়েছিল। সেই সময় প্রশাসনের লোকজনও এসেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আর কিছু হয়নি। মাটি দিয়ে গর্ত বুজিয়ে ফেলা হয়েছিল।’