রাজু সাহা, শামুকতলা: শামুকতলার এক সাধারণ কৃষক পরিবারের ছেলে রসায়নের উপর গবেষণা (Research) করতে আমেরিকা (America) যাচ্ছেন। ফ্লোরিডা ইউনির্ভাসিটিতে (University of Florida) গবেষণা করবেন তিনি। আলিপুরদুয়ার জেলার দক্ষিণ মজিদখানা গ্রামের বাসিন্দা এই তরুণের নাম দিবাকর দাস। বর্তমানে আইআইটি গুয়াহাটিতে এমএসসি পড়ছেন দিবাকর। এপ্রিল মাসে তাঁর এমএসসি ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পরেই দিবাকর আমেরিকা চলে যাবেন।
বাবা দীপক দাস কৃষিকাজের পাশাপাশি মুহুরির কাজ করেন। মা সরস্বতী দাস সাধারণ গৃহবধূ। দিবাকরের এক দাদা দেবব্রত দাস অঙ্ক (Mathematics) নিয়ে গবেষণা করছেন কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ে। গ্রামের একজন কৃতী ছাত্র আমেরিকায় গবেষণা করতে যাওয়ার খবরের রীতিমতো খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছে আলিপুরদুয়ার ২ ব্লকে। দিবাকরের গবেষণার বিষয় ‘ন্যানো মেটিরিয়াল অ্যান্ড ইটস অ্যাপ্লিকেশন ইন এনার্জি জেনারেশন, স্টোরেজ’। গবেষণার কাজে দিবাকরকে পাঁচ বছর আমেরিকায় থাকতে হবে। সেখানে গবেষণার কাজ শেষ করে পোস্ট ডক্টরেট করার পর দেশে ফিরে গবেষণা এবং অধ্যাপনা করে দেশে গবেষণার পরিসর বড় করতে চান দিবাকর। দিবাকর মজিদখানা হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক এবং যশোডাঙ্গা হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর কোচবিহার আচার্য ব্রজেন্দ্রনাথ শীল কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেন দারুণ রেজাল্ট করে। এর পরেই আইআইটি গুয়াহাটিতে এমএসসি পড়ার সুযোগ পান দিবাকর।
বাবা দীপক দাস বলেন, ‘অতি সাধারণ পরিবার আমাদের। ছেলের অনেক চাহিদা পূরণ করতে পারিনি। আর্থিক সহ নানা সমস্যার মধ্যে থেকেও আমার দুই ছেলে যেভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে তার জন্য আমি গর্বিত। ছেলে আমেরিকায় গিয়ে পড়াশোনা করবে সেটা খুবই আনন্দের। কিন্তু আমেরিকায় গিয়ে পড়াশোনা করার জন্য প্রচুর খরচ। সেটা নিয়ে খুব চিন্তিত এখন আমরা। তবে যতই সমস্যা আসুক ছেলের পড়াশোনায় যাতে কোনওভাবেই ব্যাঘাত না ঘটে সে চেষ্টা চালিয়ে যাব।’
দিবাকর বলেন, ‘আজকের বিশ্বে পুনর্নবীকরণ শক্তির উৎস সংকট একটি বড় সমস্যা। তাই আমি ন্যানো মেটিরিয়াল ব্যবহার করে শক্তি সংগ্রহ এবং সঞ্চয়ের উপর কাজ করব। এছাড়া আমি প্লাজমোনিক্স, ব্যাটারি উপকরণীয় কাজ করতে আগ্রহী। সেটা আমি আমাদের দেশের জন্যই করতে চাই।’ যশোডাঙ্গা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক খোকনচন্দ্র দে বলেন, ‘আমাদের স্কুলের বরাবরই কৃতী ছাত্র দিবাকর। দিবাকর আমেরিকায় গবেষণা করার সুযোগ পেয়েছে জেনে খুব আনন্দিত আমরা। বাড়ি ফিরলে অবশ্যই ওর সঙ্গে দেখা করতে যাব।’
শামুকতলা থানার ওসি জগদীশ রায় বলেন, ‘সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসে আমেরিকায় গবেষণা করার সুযোগ পেয়েছে আমাদের থানা এলাকার একটি ছেলে। ওঁর জন্য আমরা গর্বিত। ওঁর পড়াশোনার ক্ষেত্রে যে কোনও সহযোগিতার ব্যাপারে আমরা পাশে আছি।’