সুভাষ বর্মন, ফালাকাটা: আসাম মোড়ের এক চাষি পঞ্চাশ কেজি ঝিঙে নিয়ে আলিপুরদুয়ারের (Alipurduar) ফালাকাটা কৃষক বাজারে আসতেই দরদাম শুরু হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ২০ টাকা কেজি দরে ঝিঙে বিক্রি হল। তবে যিনি ঝিঙে কিনে নিলেন তিনি কিন্তু পাইকার নন। পরে বাইরের পাইকার সেই ঝিঙে ২৩ টাকা কেজি দরে কিনে নিলেন। অর্থাৎ কৃষকের সঙ্গে সরাসরি পাইকারের মধ্যে কিন্তু কেনাবেচা হল না। মাঝের এই ফড়েদের দৌরাত্ম্যেই এবার কৃষক বাজারের সাফল্য নিয়ে ভোটের প্রচারে তৃণমূল কতটা ফায়দা তুলতে পারবে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বিজেপি, সিপিএমের মতো বিরোধী দল কৃষক বাজারে ফড়েদের দৌরাত্ম্যর পাশাপাশি জঞ্জাল, বেহাল নিকাশি, যানজট নিয়েই ফালাকাটার মতো কৃষিবলয়ে প্রচার করছে। পরিস্থিতির নিরিখে ফড়েদের দৌরাত্ম্য অস্বীকারও করেনি শাসকদল। তবে এতে বিরোধীদেরও চক্রান্ত রয়েছে বলে শাসকদলের দাবি। তৃণমূল কিষান ও খেতমজদুর কংগ্রেসের ফালাকাটা ব্লক সভাপতি সুনীল রায়ের কথায়, ‘কখনো-কখনো কৃষক বাজারে ফড়েদের দৌরাত্ম্য দেখা যায়। তবে এতে বিজেপির লোকজনই চক্রান্ত করে। আমাদের সংগঠন কৃষকদের পাশে দাঁড়ায়।’ অন্যান্য সমস্যা নিয়ে তিনি জানান, পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা তো রয়েছে। সেসব প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট মহলে জানানো হয়েছে। তবে বিরোধীরা যতই অপপ্রচার করুক, রাজ্যের মধ্যে ফালাকাটা কৃষক বাজারের জন্য চাষিরা এখন উপকৃত।
তৃণমূলের (TMC) অবশ্য এমন যুক্তি মানতে নারাজ বিরোধীরা। বিজেপি (BJP) এবং সিপিএম (CPM) ইতিমধ্যে কৃষক বাজারে ভোটের প্রচারও করেছে। বিজেপির ফালাকাটা বিধানসভা কেন্দ্রের সংযোজক জয় সূত্রধরের কথায়, ‘এই বাজারে ফড়ে ও তোলাবাজদের দৌরাত্ম্যে অনেক সময় সাধারণ চাষিরা বঞ্চিত হন। ফসলের ন্যায্যমূল্য পান না। গোটা চক্রান্তের নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূল। তাই কৃষক বাজারের নেতিবাচক দিকগুলি আমরা প্রচারে তুলে ধরছি।’
ডিওয়াইএফআইয়ের জেলা সভাপতি বাপন গোপ বললেন, ‘ফড়েদের দৌরাত্ম্য তো সারা বছরই চলে। এছাড়া কৃষক বাজারে এখনও হাইড্রেন তৈরি হয়নি। বর্ষায় জলকাদায় চাষিদের ভোগান্তি হয়৷ আবর্জনা সমস্যা দিনদিন বাড়ছেই। সকাল ও সন্ধ্যায় যানজটও বড় সমস্যা। এসবই হল তৃণমূল পরিচালিত প্রশাসনের ব্যর্থতা। কারণ, প্রশাসনের সঠিক নজরদারি এখানে নেই।’
প্রায় রোজই উৎপন্ন কৃষিপণ্য নিয়ে চাষিদের কৃষক বাজারে আসতে হয়। তাই ফড়েদের দৌরাত্ম্য নিয়ে কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি। পারপাতলাখাওয়ার এক চাষির কথায়, কৃষক বাজারে পরিকল্পিতভাবেই এসব চলে। অসম, ভুটানের পাইকারদের কাছে সরাসরি আমরা পণ্য বিক্রি করতে পারি না। দালালরাই নির্ধারিত দামের থেকে কিছুটা কমে আমাদের কাছ থেকে পণ্য কিনে নেয়। সবকিছুই সেটিংয়ে চলে। বাইরের পাইকাররা পরে দালালদের কাছ থেকে পণ্য কেনেন।